ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইজতেমায় লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়

দ্বিতীয় পর্ব শুরু : কাল আখেরি মোনাজাত
ইজতেমায় লাখো মুসল্লির জুমার নামাজ আদায়

দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির উপস্থিতিতে দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীর তুরাগ তীরে গতকাল বাদ ফজর শুরু হয়েছে। শুরুর দিনেই ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তম জুমার নামাজ। এ নামাজকে ঘিরে সকাল থেকেই তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল নামে। তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লির মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভীর অনুপস্থিতিতে দুপুর পৌনে ২টায় অনুষ্ঠিত বিশাল জুমার নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। এর আগে মাওলানা সাদের ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভির আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমা। আগামীকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠে সমবেত হতে থাকে মুসল্লিরা। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়া টঙ্গীর বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে থেকেও মুসল্লিরা জুমার নামাজে অংশ নেয়।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম জানান, গতকাল বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ফজরের নামাজের পর উর্দু ভাষায় বয়ান করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভী, আর তা বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশি মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। আর সকাল ১০টায় ভারতের মাওলানা ইলিয়াস তালিম করেন এবং নামাজের আগে জুমার ফাজায়েলের ওপর বয়ান করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।

এদিকে, গত বুধবার রাত থেকে বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করে। এ পর্বে গতকাল পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি বিদেশি মেহমান এসেছে।

বিশ্ব ইজতেমার এ পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানিয়েছেন, প্রায় ৫৬টি দেশে থেকে ছয় হাজারের বেশি বিদেশি মেহমান ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গড়ে তুলেছেন নিরাপত্তা বলয়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই পুরো ইজতেমা এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. সফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমায় প্রতিদিন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের খেদমতে নানা কর্মসূচি পালন করছে।

আজ শনিবার বাদ ফজর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা সাঈদ বিন সাদ কান্ধলভি। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মুফতি ওসামা ইসলাম। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় মোয়াল্লেমদের উদ্দেশে তালিমে হালকায় বয়ান রাখবেন ভারতের মাওলানা আব্দুল আজিম। বাদ জোহর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ শরিফ। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মাহমুদুল্লাহ। বাদ আসর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান আলি। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করবেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। বাদ মাগরিব বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা মুফতি ইয়াকুব আলি। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।

শেষ দিন আগামীকাল রোববার বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা মুফতি মাকসুদ। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করবেন বাংলাদেশের মাওলানা শেখ আব্দুল্লাহ মনসুর। এরপরেই হেদায়েতের বয়ান ও দোয়া পরিচালনা করবেন ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। তার বয়ানের বাংলা অনুবাদ করবেন মুফতি মনির বিন ইউসুফ। বিশ্ব ইজতেমা দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী সায়েম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম আরও জানান, এ পর্যন্ত পাঁচজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেকেই বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেরপুর সদর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মোহাম্মদ আবুল কালাম (৬৫), বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের হেলিম মিয়া (৬৫) ও বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার শিবনগর এলাকার জহির উদ্দিন (৭০) মারা যান। মৃত দুই মুসল্লির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার ভোরে ইজতেমা ময়দানে আসার পথে আব্দুল্লাহপুর মাছ বাজার এলাকায় বাসের ধাক্কায় আবুল কাশেম (৬৫) নামের এক মুসল্লি মারা যান। ইজতেমা মাঠে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সঠিক তথ্য ও ঠিকানা নিশ্চিত হয়ে তাদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মাহবুব আলম জানান, ইজতেমার প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও জিএমপির পক্ষ থেকে ছয় হাজার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১৫ হাজার সদস্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত