মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ প্রধান

ফিলিস্তিনি সাহায্য সংস্থাকে প্রতিস্থাপন করা যাবে না

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনআরডব্লিউএ) বদল করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর ১২ জন কর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ থাকার পরও তিনি এ সতর্কতা জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইউএনআরডব্লিউ-সংস্থাকে অর্থায়ন স্থগিত করেছে। গুতেরেস দাতা দেশগুলোর সাথে পুনরায় অর্থ প্রদানের বিষয়ে আলোচনায় প্রাধান্য দেন। খবর এএফপি’র। গুতেরেস এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, গাজার অভ্যন্তরে আর কোনো সংস্থার অর্থবহ উপস্থিতি নেই এবং এই পরিস্থিতিতে আর কোনো সংস্থাই এর সঙ্গে তুলনীয় নয়। কোনো সংস্থা এটিকে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হবে না। গত মাসের শেষের দিকে গাজা উপত্যকায় ইউএনআরডব্লিউএকে হামাসের সামরিক কার্যকলাপের জন্য সংস্থার অবকাঠামো ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েল অভিযুক্ত করার পরে বিরোধ তীব্রতর হয়। ইসরায়েলের অভিযোগের বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের ইউএনআরডব্লিউএ-এর বক্তব্যকে গুতেরেস ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বলে অভিহিত করে বলেন, ১২ জন কর্মী হামাসের হামলায় জড়িত থাকায় অর্থায়ন হ্রাস সাধারণ ফিলিস্তিনিদের প্রভাবিত করবে। জাতিসংঘের সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের তদন্তের অধীন রয়েছে। ইসরায়েল সংস্থাটিকে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত করে, যুদ্ধের পরে গাজায় সংস্থাটির কাজ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গাজায় অব্যাহত সহায়তায় সর্বোত্তম সংস্থা উল্লেখ করে গুতেরেস ইউএনআরডব্লিউএ-এর ব্যয় কার্যকর করার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

উত্তর এবং মধ্য গাজায় ৩ লাখ লোক খাদ্য সংকটে : ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) গত বৃহস্পতিবার সতর্ক করে বলেছে, খাদ্যের অভাবে উত্তর ও মধ্য গাজায় কয়েক লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি আগে ২৩ জানুয়ারি সংস্থাটিকে শেষবার এ অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী অন্যান্য সংস্থাগুলোও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ত্রাণ পেতে বাধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। লাজারিনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘বছরের শুরু থেকে উত্তরে আমাদের সাহায্য মিশনের সহায়তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, জাতিসংঘ সংস্থা উত্তর গাজাকে অনাহার এবং ক্ষুধার গভীর সংকট এলাকা চিহ্নিত করেছে। কারণ, সেখানে মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। লাজারিনি ‘এ অঞ্চলে বসবাসকারী অন্তত ৩ লাখ মানুষ তাদের বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সহায়তার ওপর নির্ভর।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর ক্ষুদ্র, ঘনবসতিপূর্ণ গাজা অঞ্চল অবরোধ করে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে এবং উত্তর ও মধ্য গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। গাজার আনুমানিক ২৪ লাখ লোকের অর্ধেকেরও বেশি এখন দক্ষিণের রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছে। যেখানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন সৈন্যদের রাফাহ আক্রমণের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন।

গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ বিষয়ক পরিচালক থমাস হোয়াইট বলেছেন, রাফাহতে আক্রমণাত্মক অভিযান নিয়ে এখন ‘চরম উদ্বেগ’ রয়েছে। এখান থেকে সংস্থাটি পুরো গাজা উপত্যকার জন্য তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের যদি রাফাহ থেকে সরে যেতে হয় তাহলে সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই কঠিন হবে। আমরা এখনই জনগণের চাহিদা মেটাতে সংগ্রাম করছি।’

তিনি বলেন, ‘যদি নতুন করে হাজার হাজার লোক আবার দক্ষিণে সরে যায়, তবে তাদের সমর্থন করার জন্য আমাদের কাছে সংস্থান নেই এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে থাকা শহর থেকে আমাদের কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না।’ দক্ষিণে সরে যাওয়া সত্ত্বেও অনেকে ওয়াদি গাজা, গাজার কেন্দ্রে এবং উত্তরে রয়ে গেছেন।

গাজায় জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ-এর প্রধান জর্জিওস পেট্রোপোলোস বলেছেন, এই অঞ্চলটিকে ‘ক্ষুধা ও হতাশার মরুভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে’। তিনি বুধবার এএফপি’কে বলেন, ত্রাণ সংস্থাগুলোকে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে, যখন কিছু ট্রাক এদিক দিয়ে যাচ্ছে, সেগুলোকে বাসিন্দারা ঘিরে ধরছে। উত্তর গাজার এসব এলাকা ‘অনাহারের দ্বারপ্রান্তে’ রয়েছে।

গত বুধবার এএফপি’র একজন সাংবাদিক গাজা শহরের দক্ষিণে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রধান সড়কে ত্রাণবাহী ট্রাকের একটি বহরের অপেক্ষায় শত শত লোককে প্রত্যক্ষ করেছেন।

এএফপি’র সাংবাদিকরা জানান, যখন তারা ইসরায়েলি সামরিক যানগুলোকে তাদের দিকে অগ্রসর হতে দেখেন। তখন অনেকেই পালিয়ে যায় কিন্তু অন্যরা বহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ইসরায়েলি হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।