চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী তীর্থপীঠ বাড়বকুণ্ড অগ্নিকুণ্ড মন্দিরে (বাড়বানল মন্দির) রাতের আঁধারে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা অগ্নিকুণ্ডসহ পাঁচটি মন্দিরে থাকা দেবদেবীর প্রতীমা ও বিগ্রহ ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে মন্দিরের সেবায়েত কুমারী স্মৃতিলতা ভারতী বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময়ে দুর্বৃত্তরা পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত হাজারো বছরের প্রাচীন এ ধর্মীয় তীর্থপীঠে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা মন্দিরের ভেতরে ইট, পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি অগ্নিকুণ্ডে থাকা দুটি শিবের বিগ্রহ, হনুমান মন্দিরের বিগ্রহ, ত্রিনাথ মন্দিরে থাকা ত্রিনাথ ঠাকুরের বিগ্রহ, অন্নপূর্ণা ও জগন্নাথ মন্দিরে থাকা বিগ্রহগুলো ভাঙচুর করেছে। সেই সাথে অন্নপূর্ণা দেবী ও ত্রিনাথ ঠাকুরের মূর্তি ভাঙচুর করে মন্দিরের বাইরে ফেলে দিয়েছে। ইট-পাথর দিয়ে চাপা দিয়েছে শিব ঠাকুরের বিগ্রহ। মন্দিরের সেবায়েত কুমারী স্মৃতি লতা ভারতীর ভাইয়ের ছেলে সেবায়েত কালী নারায়ণ ভারতী জানান, মন্দির ভেঙে তীর্থপীঠের জায়গাগুলো দখল করার জন্য একটি অসাধুচক্র অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তারা এ ঘটনার সপ্তাখানেক আগেও প্রকাশ্য তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। হুমকির ঘটনার এক সপ্তাহ না পেরুতেই ধর্মীয় তীর্থপীঠে থাকা পাঁচটি মন্দিরে ভাঙচুর চালিয়েছে। ভেঙে উপড়ে ফেলেছে মন্দিরের ভেতরে থাকা দেব-দেবীর প্রতীমা ও বিগ্রহগুলো। তাকে প্রকাশ্য প্রাণে মেরে ফেলার ও ধর্মীয় স্থাপনা দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকা চক্রটি এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা তার। এ ঘটনার সঠিক বিচার পেতে তারা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি ধর্মীয় স্থাপনা রক্ষায় সনাতনী সব সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি জড়িতদের চিহ্নিত-পূর্বক আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
বাড়বকুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজী জানান, দেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে এ হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা তার। ধর্মীয় স্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত এ হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জড়িত দুর্বৃত্তদের চিহ্নিতপূর্বক দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
সীতাকুণ্ড উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সভাপতি বিমল নাথ জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে চিহ্নিত কিছু অসাধু চক্র রাতের আঁধারে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি এ ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) পাপেল রায় বলেন, অগ্নিকুণ্ড মন্দিরে ভাঙচুরের অভিযোগে সেবায়েত থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ পরবর্তীতে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি মন্দিরের বাইরে প্রতিমা ভাঙচুর করে বাইরে ফেলে রাখা ও বিগ্রহগুলোকে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন। এ ঘটনায় তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।