ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউনাইটেডে শিশু আয়ানের মৃত্যু

রিটের বিষয়ে আদেশ আগামী সপ্তাহে

রিটের বিষয়ে আদেশ আগামী সপ্তাহে

রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার পর শিশু আয়ানের (৫) মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা রিটের বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী সপ্তাহে দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তাফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

শুনানিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, সারাদেশে অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১ হাজার ২৭টি এবং নিবন্ধিত ১৫ হাজার ২৩টি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনের ওপরে আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে।

আদালতে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া আরজু। রিটের পক্ষে আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। শুনানির সময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা রিটের বিষয়ে শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে আদেশের জন্য গতকাল দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। গত ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত ৩১ ডিসেম্বর আনন্দ নিয়েই রাজধানীর সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। অনুমতি ছাড়াই ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে সুন্নাতে খতনা করান চিকিৎসক। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার।

স্বজনরা জানান, আয়ানের সুন্নাতে খতনার দিন অপারেশন থিয়েটারে মূলত ওই মেডিকেল কলেজের ৪০ থেকে ৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভেতরে ছিলেন। টানা সাত দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা কীভাবে ও কোন কারণে ঘটেছে, তা যথাযথ অনুসন্ধানে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তার মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলা পেলে জড়িত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলেন হাইকোর্ট। শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ২৯ জানুয়ারি আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

আদালতে ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া আরজু। রিটের পক্ষে আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। শুনানির সময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

শুনানির শুরুতে প্রতিবেদন থেকে দুজন চিকিৎসক ও শিশুটির বাবার বক্তব্য তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। একপর্যায়ে আদালত বলেন, ময়নাতদন্ত হয়েছিল? তখন ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, একটি ফৌজদারি মামলায় হয়েছে, ময়নাতদন্ত হয়েছে।

চিকিৎসকসহ শিশুটির বাবার বক্তব্য উপস্থাপনের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বলেন, বেশ কিছু মেডিকেল টার্ম (চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহৃত শব্দ) আছে। পর্যবেক্ষণ অংশ একজন চিকিৎসক তুলে ধরবেন। এরপর আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ অংশ তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (আইন শাখা) পরিমল কুমার পাল। তিনি বলেন, পিএসিইউ করার সময় আয়ানের ওজন ১৮ কেজি লিপিবদ্ধ করা হয়। এ সময় আদালত বলেন, ওজন হলো প্রথম শর্ত। কিন্তু যখনই দেখা গেল তার সমস্যা আছে, তখন অস্ত্রোপচার রাখা উচিত ছিল।

এরপর আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ শুনানিতে বলেন, প্রতিবেদনটিতে হেরফের (ম্যানিপুলেটেড) রয়েছে। যিনি অ্যানেসথেসিয়া দিয়েছেন, সাব্বির আহমেদ। বিএমডিসির ওয়েবসাইটে দেখেছি অ্যানেসথেসিয়ার ওপর তিনি ডিপ্লোমা করেছেন। পাস করেছেন ২০২২ সালে।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত চার সুপারিশের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে হাসপাতালে একাধিক অ্যানেসথেসিওলজিস্ট (অবেদনবিদ) নিয়োগ দেওয়া; যা শুনানিতে তুলে ধরেন আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ। একপর্যায়ে আদালত বলেন, পুরোটাই হাস্যকর। আদালত বলেন, হাসপাতালের অনুমোদন আছে? তখন আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ বলেন, সরকারের অনুমোদনের পর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা এবং হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা রাখার কথা সুপারিশে বলা হয়েছে। এ সময় আদালত বলেন, এটা এক ধরনের আই ওয়াশ (লোক দেখানো)। রিট আবেদনকারী আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ বলেন, এটি ম্যানিপুলেট রিপোর্ট। অধিকতর তদন্ত চাই। তখন আদালত বলেন, হলফনামা আকারে বক্তব্য দাখিল করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত