ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন

অবশেষে মরদেহ বুঝে পেলেন স্বজনরা

অবশেষে মরদেহ বুঝে পেলেন স্বজনরা

গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় চার যাত্রী নিহত হন, আহত হন অনেকে। তবে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়ায় মরদেহগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দেড় মাস পর অবশেষে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে মরদেহগুলো শনাক্ত করে নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করল রেলওয়ে থানা পুলিশ।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গ থেকে পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত আবু তালহা (২৪), চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমি (২৮), নাতাশা জেসমিন নেকি (২৫), ও এলিনা ইয়াসমিনের (৪০) মরদেহ তাদের পরিবারে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস জানান, ঘটনার পর পুড়ে যাওয়া চারটি মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য রাখা হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে। তাদের ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচিং করায় দীর্ঘ এক মাস ১০ দিন পর চার জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন এলিনা, রত্না, ইকবাল বাহার ও তাদের সন্তান এবং সৌমি, তালহাসহ বেশ কিছু যাত্রী। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোর আগে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুনে ট্রেনটির চারটি বগি পুড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৪ জন এবং এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোলের এলিনা ইয়াসমিন। বাবা সাঈদুর রহমান বাবুর কুলখানি শেষে ৬ মাসের শিশুসন্তান, বোন ডেইজি আক্তার রত্না, বোনজামাই ইকবাল বাহার ও তাদের দুই সন্তানসহ বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘চ’ বগিতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তারা। আগুনে এলিনার সঙ্গে থাকা স্বজনদের সবাই দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নেন। ঘটনার ১০ দিন আগে এলিনা তার বাবার মৃত্যুতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে একইদিন ওই ট্রেনে ভাই-ভাবির বাসায় বেড়াতে রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় আসছিলেন রাজবাড়ী খানগঞ্জ বেলগাছি সরকার বাড়ির চন্দ্রিমা চৌধুরী ওরফে সৌমি। এ ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সৌমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে পড়ালেখা করতেন।

একই ট্রেনে রাজবাড়ী থেকে আবু তালহা ও আবু তাসলাম দুই ভাই ঢাকায় যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর আবু তাসলাম ট্রেন থেকে নেমে যেতে পারলেও নিখোঁজ হন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু তালহা। ট্রেনের জানালায় হাত বের করে আকুতি জানিয়ে পুড়ে মারা যাওয়া ছেলেটাই ছিলেন আবু তালহা।

নিহত এলিনার মামাতো ভাই কাজী পলাশ বলেন, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তার বোনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে এবং ঢাকা মেডিকেল থেকে মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করবে।

রাজবাড়ী সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুর রহমান সোহান নিখোঁজ সৌমি ও কালুখালী মৃগী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ মতিন আবু তালহার মরদেহ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত ও পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ৫ জানুয়ারি যশোর থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটিতে রাজবাড়ী থেকে ৬৫ জনের মতো যাত্রী উঠেছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত