দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি শাক ছিল গিমা। এটি বর্তমানে পাওয়া দুষ্কর। নগরায়ণ, ফসলি জমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশকের ব্যবহার, আগাছা নিধনসহ নানা কারণে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ব্যবহার না থাকায় শাকটির সঙ্গে নতুন প্রজন্ম খুব একটা পরিচিত নয়। অনেকে এটিকে আগাছা মনে করে। তাই সারা দেশের মতো কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় কালের বিবর্তনে অস্তিত্ব সংকটে শাকটি। যার ফলে স্থানীয়রা হারাতে বসেছেন পুষ্টিগুণ ও নানা ঔষধি গুণে ভরা এই উদ্ভিদটি। চাষের আওতায় এনে এ উদ্ভিদটি টিকিয়ে রাখার দাবি সচেতন মহলের। জানা গেছে, গিমা শাক পরিত্যক্ত জমিতেও হয়। আবার রবিশস্যের জমিতে, আলু, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদির খেতে জন্মে। যত্ন ছাড়া এই শাক হৃষ্ট-পুষ্টভাবে বেঁচে থাকে। তবে স্যাঁতস্যাঁতে অর্থাৎ কলতলা, পুকুরপাড়ে, নালার পাশে এটি ভালো জন্মে। এর বোটানিকাল নাম Glinus oppositifolius. প্রবীণরা জানান, গিমা শাক চোখ উঠলে, চোখ দিয়ে পিচুটি পড়লে, এটি সেঁকে নিয়ে তার রস ফোটা ফোটা করে চোখে দিলে চোখের করকরানি কমে যায়। পিচুটি পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এটি অম্ল পিত্ত রোগে যাদের বমি হয়, তারা এটির পাতার রস এক চামচ এবং তার সঙ্গে আমলকি ভেজানো জল আধাকাপ মিশিয়ে সকালে খাবেন, এতে অচিরেই বমি করার কষ্ট দূর হবে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, ফুসফুসের সমস্যা, এসিডিটি, চুলকানি, মাংসপেশি ও হাড়ের ব্যথায় অধিক কার্যকরী। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। উপজেলা সদরের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ছোটবেলায় আবাদি জমিতে ও রাস্তার পাশে এমনিতেই গিমা শাক জন্মাতে দেখতাম। আমাদের মা-চাচিরা শাক হিসেবে রান্না করতেন। সে সময় এত অসুখবিসুখ ছিল না। ফসলি জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এই শাকটি। শাকটির বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা বলেন, অন্যান্য শাকের মতো গিমা নামক উদ্ভিদটিও একটি শাক। তবে এই শাকের মধ্যে পুষ্টি গুণের পাশাপাশি নানা ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি রবি শস্যের মাঠে ও রাস্তার পাশে এবং বাড়ির আঙিনায় জন্মে। তবে সময়ের পরিক্রমায় এই ঔষধি উদ্ভিদটি প্রকৃতি থেকে হারাতে বসেছে। এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার সমণ্ডপ্রচেষ্টা প্রয়োজন। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, অনেকেই গিমা শাককে আগাছা ভেবে ভুল করেন। প্রকৃতপক্ষে গিমা শাক নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এছাড়া গিমা শাকের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। কোষ্ঠকাঠিন্য, পাকস্থলি ও রক্তের অন্যান্য সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে গিমা শাক। গিমা শাক খেলে অ্যাসিডিটির প্রকোপ কমে এবং ওজন কমাতেও কার্যকারি ভূমিকা পালন করে। গিমা শাক অন্যান্য সবজির সঙ্গে তরকারি বানিয়ে খাওয়া যায়। এ ছাড়া বড়া বানিয়েও খাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, গিমা শাক প্রাকৃতিকভাবে যে কোনো মাটিতে জন্মে। রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়, বিল, রবিশস্যের মাঠে ও ধানখেতের আইলে গিমা শাক জন্মাতে দেখা যায়। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে গিমা শাক সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে গিমা শাককে চাষের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।