মন্ত্রীর মন রক্ষায় দুই হাসপাতালে অভিযান : ছয় বিভাগ সিলগালা

* ইউনিয়ন হাসপাতালে গিয়ে হতবাক মন্ত্রী * ম্যানেজার ছিলেন ধূমপানরত : ‘আইসিইউ’তে ছিলেন সাধারণ চিকিৎসক

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

কক্সবাজারে বেসরকারি ‘ইউনিয়ন হাসপাতাল’ এ হঠাৎ গিয়ে যা দেখলেন, তাতেই হতবাক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ প্রদান করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার ইউনিয়ন হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে ছয়টি বিভাগ সিলাগালাসহ সতর্ক করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তিন দিনের এক সফরে কক্সবাজার আসেন গত বৃহস্পতিবার দুপুরে। তিনি তার নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে শুক্রবার বিকাল হঠাৎ করে একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। মন্ত্রীর পরিদর্শন সংক্রান্ত বিষয়ে শুক্রবার রাতে ‘স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর’ এর ফেসবুক ফেইসে ছবি-ভিডিওসহ একটি বিবৃতি প্রচার করে।

যেখানে বলা হয়েছে- ‘শুক্রবার বিকালে মন্ত্রী আকস্মিকভাবে কক্সবাজার শহরের জেলা সদর হাসপাতাল-সংলগ্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিয়ন হাসপাতাল’ পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী পরিদর্শনকালে ওই হাসপাতালটির ম্যানেজারকে ধূমপানরত অবস্থায় দেখতে পান। হাসপাতালটির ‘আইসিইউ’তে গিয়ে দেখেন ওখানে বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক নেই। সাধারণ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে নার্সের বদলে মিডওয়াইফের উপস্থিতি দেখতে পান এবং ওই হাসপাতালটিতে সিটি স্ক্যানের অনুমোদন না থাকার পরও সিটি স্ক্যানের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।

এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এছাড়া তিনি কক্সবাজার জেলাসহ সারা দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এ সময় মন্ত্রী ওই হাসপাতালের আইসিইউ থেকে একজন সংকটাপন্ন রোগীকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজমিন আলম তুলি ও সদর উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানের পর পরই ডা. টিটু চন্দ্র শীল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অভিযানে ইউনিয়ন হাসপাতালে আইসিইউ, সিটি স্ক্যানিং, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটার সীলাগালা করে বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তিতে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ দলের পরিদর্শনের পর এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এ সময় ইউনিয়ন হাসপাতালের আইসিইউ এবং পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। একই সঙ্গে হাসপাতালটির অন্যান্য অসঙ্গতির ব্যাপারে সর্তক রা হয়েছে। এরপর জেনারেল হাসপাতালে ইসিজি বিভাগে সিলগালা ও এক্সরে বিভাগ বন্ধ রেখে ক্রুটি এক সপ্তাহের মধ্যে সংশোধন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যদিও ইউনিয়ন হাসপাতালের একটি সূত্র এবং কাগজপত্রে দেখা গেছে ওই হাসপাতালটিতে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগে অংশীদার ডা. টিটু চন্দ্র শীল নিজেই। ফলে হাসপাতালটির সব বিভাগের নিবন্ধন তদারকি না করে মন্ত্রী যে চারটি বিভাগের কথা বলেছেন, তা বন্ধ করে দায়সারা অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। অথচ ইউনিয়ন হাসপাতালের একটি বিভাগের নিবন্ধনও নবায়ন নেই বলে সিভিল সার্জনের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নথিপত্র বলছে, কক্সবাজার জেলায় মোট ৩৪টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অনুমোদন ছিল। যেখানে কক্সবাজার সদরে রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে বর্তমানে পাঁচটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া অন্যান্যগুলো এখনও নবায়ন হয়নি। সাতটি নবায়নের আবেদন জমা দিয়ে চলছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। এমন কী কোনো প্রকার অনুমোদন না নিয়ে চলছে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে সিটি হাসপাতাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালে গেইটে থাকা ডিজিটাল হাসপাতালের কোনো বিভাগের নবায়ন হয়নি গত ২ বছর ধরে। এ বিষয়ে ডা. টিটু চন্দ্র শীলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সারাদেশে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব হাসপাতালে অভিযান চালানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে অভিযানে নেতৃত্বদানকারী ডা. টিটু চন্দ্র শীল নিজেই বেসরকারি ইউনিয়ন হাসপাতালের বিনিয়োগে অংশীদার বলে স্বীকার করে বলেন, আমি কেন? অনেক ডাক্তারই এই হাসপাতালের অংশীদার।