পাবনা সড়ক বিভাগ ও জেলা পরিষদের মধ্যে মালিকানা জটিলতায় জমি হস্তান্তর না হওয়ায় জেলার টেবুনিয়া-চাটমোহর-হামকুরিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪০ কিমি. অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার সাথে পাবনার দ্রুততম যোগাযোগ স্থাপনে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে এই সড়কের পার্শ্ববর্তী জায়গা দখল করে যত্রতত্র দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এতে সড়কটিতে যানজট বেড়েই চলেছে। প্রায়ই ঘটছে নানামুখী দুর্ঘটনা। অপরদিকে সড়কের জমি দখল করে স্থাপনা বরাদ্দের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। গুরুত্বপূর্ণ এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি অবৈধ দখল মুক্ত করে সড়কের প্রশস্ততা বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নথি বলছে, সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সড়ক পরিবহন উইংয়ের ২০০৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত গেজেটে সারা দেশে ৩০৮১.৪৩ কিমি. আঞ্চলিক মহাসড়কের মালিকানা দেয়া হয় সড়ক ও জনপথ বিভাগকে। এর অন্তর্ভুক্ত ছিলো টেবুনিয়া-হামকুরিয়া ৩৯ কিমি. সড়কটি। এরপর ২০১৫ সালের গেজেটে ৪২৪৬.৯৭ কিমি. ১২৬টি আঞ্চলিক মহাসড়কের হালনাগাদকৃত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে টেবুনিয়া-হামকুরিয়া সড়কটির দৈর্ঘ্য বেঁধে দেয়া হয় ৪০.৫৫ কিমি.। একইসাথে মালিকানা নিয়ে এলজিইডি ও সওজের দ্বৈততা পরিহারে এলজিইডির সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়। মালিকানা নির্ধারণের পরও সওজের অনুকূলে হস্তান্তর না হওয়ায় সড়কটি পাবনা জেলা পরিষদের নামে রেকর্ডভুক্ত থাকায় নিজ দপ্তরের নামে রেকর্ডভুক্ত করে তা রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশনা দিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পাবনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি চিঠি দেয় সড়ক ও জনপথ অধিপ্তর। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে আরেকটি চিঠিতে ওই মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে সড়কগুলো রেকর্ডভুক্ত ও নামজারি সম্পন্ন করতে রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে পত্র পাঠায় সওজ অধিদপ্তর। কিন্তু সে নির্দেশনাও বাস্তবায়িত না হওয়ায় সড়কের ভূমির মালিকানা থেকে যায় জেলা পরিষদের নামেই। আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে টেবুনিয়া-হামকুড়িয়া সড়কের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সড়ক বভাগ করলেও, ভূমি মালিকানা জটিলতার সুযোগে মহাসড়কের দুইধার দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বাজার, মার্কেট ও দোকানপাট।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সওজ মালিকানা বুঝে না নেয়ায় সড়কটি নিজেদের দাবি করে পাবনা জেলা পরিষদ। সরকারি গেজেটে তাদের মালিকানা দেয়া হলেও সড়কটির দেখভালও করে না সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এর সুযোগ নিয়ে জেলা পরিষদের অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে দোকান বরাদ্দ দেবার কথা বলে প্রতারণা করে ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। বিনিময়ে সড়কের জায়গা দখল করে দোকানপাট স্থাপন করে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছে অসাধু চক্রটি। সম্প্রতি সড়কের টেবুনিয়া, দেবোত্তর বাজার, আটঘরিয়া ও চাটমোহরের
বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, একেবারে পাকা সড়ক ঘেঁষেই তোলা
হয়েছে নানারকম দোকানপাট। এতে করে সড়ক বেশি সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে সড়কে ব্যাপকহারে যানজট বেড়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। দোকানদারদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানান, সড়কের পাশের জায়গা জেলা পরিষদের লোকজনই দেখাশোনা করেন। মার্কেট বা এটা সেটা নির্মাণ করা হবে জানিয়ে সয়েল টেস্ট ও (মাটি পরীক্ষা) করেছেন কয়েকবার। তাদের টাকা দিয়ে দোকান গড়ে তোলার অনুমতি নিয়েছেন দোকান মালিকরা। এদিকে সড়কটি উদ্ধার করে প্রশস্তকরণসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এই সড়ক দিয়েই অল্প সময়ে কুষ্টিয়া ও রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায় প্রবেশ সম্ভব বলে দাবি স্থানীয়দের। এতে করে ঢাকায় যেতে কমপক্ষে এক থেকে দেড়ঘণ্টা
সময় ও ব্যাপক জ্বালানি সাশ্রয় হবে বলেও জানান তারা। আটঘড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার
ক্ষমতায় আসার পর টেবুনিয়া হতে চলনবিলের বিচ্ছিন্ন দুই প্রান্তের সংযোগ স্থাপন করে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে এই সড়কটি পাবনা সদর, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ কয়েকটি উপজেলার রাজধানীর সাথে যোগাযোগের বিকল্প পথ সৃষ্টি করে। এতে কৃষি ও মৎস্য সম্পদ নির্ভর অর্থনীতিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এখন এই পথে ঢাকা যেতে এক দেড় ঘণ্টা সময় কম লাগে ফলে দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে। এখন সড়কটি সংস্কার ও প্রশস্ত মহাসড়ক
হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। এ বিষয়ে পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আসম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কোনো ভূমি জেলা পরিষদ ইজারা দেয়নি। মহাসড়ক
ঘোষণার আগের দুয়েকটি মার্কেট থাকতে পারে। জেলা পরিষদের নামে অবৈধ দখল হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, আঞ্চলিক মহাসড়ক হিসেবে গেজেট প্রকাশিত হলেও জেলা পরিষদ ও সড়ক বিভাগের মধ্যে হস্তান্তর না হওয়ায় সড়ক বিভাগ টেবুনিয়া-হামকুরিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ভূমির মালিকানা বুঝে পায়নি। এটি কেন্দ্রীয়ভাবে হস্তান্তর হলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারব। তবে, মহাসড়ক নীতিমালা অনুযায়ী আমরা সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করে থাকি। একই সাথে মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী দশ মিটারের মধ্যে কোনও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা গড়ার সুযোগ নেই। আমরা সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে জানিয়েছি। নির্দেশনা না মেনে অবৈধ স্থাপনা গড়া হলে আমরা তা উচ্ছেদ করব। প্রতারণা এড়াতে স্থানীয়দের এসব স্থাপনায় বিনিয়োগ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায় এরইমধ্যে সড়কটি মহাসড়কে উন্নীতকরণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাই ও জরিপ চলছে। আশা করছি শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হবে।