সশস্ত্র সংগঠন সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএফ) আতঙ্কের কারণে বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি উপজেলার গণপরিবহণ বন্ধ রাখা হয়েছে।
গতকাল সকাল থেকেই এসব গণপরিবহণ বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রুমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং।
তিনি জানিয়েছেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলায় কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যদের গুলিতে রুমা সদর ইউনিয়নের এক যুবক আহত হয়। এর প্রতিবাদে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নাগরিক সমাজের ব্যানারে কেএনএফের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে ক্ষুব্দ হয়েছে কেএনএফ। সংগঠনটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠনের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং গতকাল থেকে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি উপজেলায় চলাচলকারী গণপরিবহণ ধর্মঘট পালনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু গতকাল সকালে রুমা উপজেলায় বাসের লাইনম্যানের দায়িত্বে থাকা লুপ্রু মারমা নিজ বাড়ি সদরঘাট থেকে রুমা বাজারে যাওয়ার সময় পলিকা পাড়া থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় কেএনএ সশস্ত্র সদস্যরা। এ সময় তাকে মারধর করে ছেড়ে দেয়। আহত লুপ্রু মারমা বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান বাস মালিক সমিতির অফিস সহকারী মিলন দাস। তিনি জানান, বান্দরবান স্টেশন হতে সকালে যথারীতি বাসের টিকিট বিক্রি করলেও যাতায়াতের নিরাপত্তার কারণে আবার যাত্রীদের সব টিকিট ফেরত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবং জানান, গতকাল সকালে বম সম্প্রদায় অধ্যুষিত সদরঘাট, রুমা সরকারী কলেজ এলাকা, পলিকা পাড়া, বেথেল পাড়া এলাকায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। আতঙ্কের কারণে দোকানপাটও খুলেনি।
বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-রুমা-থানচি মোটরযান পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আলম জানিয়েছেন, বান্দরবান থেকে বাঘমারা ও রোয়াংছড়ি বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিন্তু রুমা ও থানচি স্টেশন থেকে সকাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি।
রুমা থানার ওসি মো. শাহজাহান জানান, রুমা-বান্দরবান যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে। পরিবহণ শ্রমিককে মারধর করার ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেননি। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুল হক জানান, গতকাল সকালে একদল সন্ত্রাসী বাসের লাইনম্যানকে তুলে নিয়ে গিয়ে আহত করার ঘটনা শুনেছি। এতে বান্দরবান ও রুমা উপজেলায় বাস চলাচল করেনি।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে জননিরাপত্তার জন্য উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং পর্যাপ্ত পুলিশের টহল টিম কাজ করছে। বম সোশ্যাল কাউন্সিলের নেতারাসহ বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে।
কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সাথে আলোচনা করার জন্য ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লার নেতৃত্বে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মূখপাত্র ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বর্তমান পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে আছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় অচিরেই কেএনএফের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।