ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অযত্নে ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি জবিতে নেই স্মৃতিস্তম্ভ-ভাস্কর্য

* সাবেক এ ছাত্রকে নিয়ে গর্বিত শিক্ষার্থীরা
অযত্নে ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি জবিতে নেই স্মৃতিস্তম্ভ-ভাস্কর্য

বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় অধ্যায় ভাষা আন্দোলন। মায়ের ভাষাকে কিনতে জীবন উৎসর্গ করে এ দেশের দামাল ছেলেরা। ভাষার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার্থে বাংলার সূর্য সন্তানদের আত্মত্যাগ ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ। তিনি ছিলেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। শহীদ রফিক ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বতর্মানে এ গ্রামের নাম রফিকনগর।

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে উত্তাল ঢাকা। ২১শে ফেব্রুয়ারি রাজপথে নামে বিশাল মিছিল। রফিক অংশ নেন এ মিছিলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে মিছিলে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে শহীদ হন রফিক। এরপর তাকে আজিমপুর গোরস্থানে সমাহিত করা হয়। জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে। পৃথিবীতে কেউ চিরদিন থাকে না। তবে কর্ম তাকে বাঁচিয়ে রাখে যুগ যুগ। জগন্নাথের ছাত্র রফিক ভাষার জন্য জীবন ত্যাগ করলেও শুধুমাত্র একটি ভবনের নামের মধ্যেই তার স্মৃতি সীমাবদ্ধ। বীর রফিকের নামে নেই কোনো স্মৃতি স্তম্ভ, ভাস্কর্য বা বিশেষ কোনো স্থাপনা। এমনকি রফিকের জন্ম ও মৃত্যু দিনেও তেমন কিছু করা হয় না। বীর রফিককে নিয়ে কখনো করা হয়না কোনো স্মরণসভা বা বিশেষ কোনো আয়োজন। শুধু নামেই আছে জরাজীর্ণ এক ভবন। তথ্য সূত্রে জানা যায়, ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো বিজনেস স্টাডিজ ভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’ নামকরণের প্রস্তাব করা হলে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বর্তমানে এ ভবনে বাংলা ও ইতিহাস বিভাগের ক্লাস কার্যক্রম চলে। নিচের তলায় রয়েছে কাউন্সিলিং সেন্টার, মেডিকেল সেন্টার ও শরীরচর্চা শিক্ষা কেন্দ্রসহ আরো কয়েকটি অফিসকক্ষ। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান কায়েজ বলেন, ভাষা শহীদ রফিক যে আমাদের এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্র এটা মনে করতেই আমাদের গর্ব বোধ হয়। ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি ও সম্মানে যা যা করণীয় তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে করা উচিত। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক বড় প্রেরণা ছিল ভাষা আন্দোলন। ভাষা শহীদদের আমরা মন থেকে শ্রদ্ধা করি। ভাষা শহীদ রফিক আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী, দেশের বীর সন্তান। তার প্রতি আমাদের যথেষ্ট সম্মান রাখতে হবে। সব ভাষা শহীদদের প্রতিই আমাদের সম্মান রয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে ভাষা শহীদদের সম্পর্কে জানতে পারে সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষায় আমাদের বিশেষ কিছু করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ভাষা শহীদ রফিক স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক রকি আহমেদ বলেন, ভাষা আন্দোলনে প্রথম শহীদ হন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রফিকউদ্দিন আহমদ। অথচ তার নামে শুধু একটি ভবন ছাড়া কিছুই নেই। তার কোন ম্যুরাল নেই। স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো কর্নার বা গবেষণা কেন্দ্র নেই। তাদের পরিবারে যারা জীবিত আছে তাদের কোন খোঁজও নেয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে দাবি, ভাষা আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান তথা প্রথম ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদের স্মৃতি রক্ষার্থে গবেষণা কেন্দ্র বা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নামকরণ রফিকের নামে করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিকের একটি ভাস্কর্য তৈরি করার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মাদ বলেন, আমরা এবার ভাষা শহীদ রফিকের স্মরণে আলোচনা সভা রাখছি। যেখানে ভাষা শহীদ রফিকসহ সব ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের জীবন ও আত্মত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। ভাষা শহীদ রফিকের স্মরণে আরো কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত