নীলফামারী জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে কৃষিকাজ করেন। এতদিন সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলেও এখন আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেছেন জেলার কৃষকরা। সৌরশক্তিনির্ভর সেচপ্রযুক্তি জেলার কৃষিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। নীলফামারীর বিভিন্ন নদীর চরের জমিগুলো এক ফসলি হওয়ায় বছরে একটি আবাদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। এখন সরকারের নানামুখী উদ্যোগে নদীর বালুময় জমিগুলোকে সৌরশক্তিনির্ভর কৃষি প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃপক্ষ বৃহত্তর নীলফামারী জেলায় এই প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জেলায় সেচ সম্প্রসারণ।’ এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় ৫০০’র অধিক কৃষক। এই প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী সদর, ডোমার, ডিমলা ও সৈয়দপুরসহ মোট ১০টি সোলার চালিত পাম্প বসানো হয়েছে। যে জমির মালিককে দেয়া হয়েছে তিনিই দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। কৃষকদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ তারাই নিচ্ছেন। এতে কর্তৃপক্ষকে আলাদা করে দিতে হচ্ছে না কোনো খরচ। নদীর পানির পাশাপাশি ভূ-গর্ভস্থ পানিও উঠানো হয় সেই পাম্প দিয়ে। তারপর সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে যন্ত্রের মাধ্যমে সেই পানি যাচ্ছে কৃষিজমির সেচ কাজে। শুকনো মৌসুমে যেসব এলাকায় স্বল্প পানির চাষাবাদ হয়, সেসব এলাকার কৃষকরা দারুণ সুবিধা পাচ্ছেন এর মাধ্যমে। এতে করে এই প্রকল্প নীলফামারী জেলায় কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কৃষক ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বলেন, অল্প খরচে এই সুবিধায় তাদের দৈনন্দিন জীবনমান পাল্টে গেছে। সুবিধাভোগী কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নদীর চরের জমিগুলো শুষ্ক মৌসুমে সেচের অভাবে আমার প্রায় ৫ বিঘা জমি পতিত থাকত। সোলারের এই সুবিধার পর এর মাধ্যমে ফসলে সেচ দেয়ায় পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, মরিচ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, আলু চাষের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি।’ কৃষক ইশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নদীর চর বালু হওয়ায় পানির ব্যবস্থা না থাকলেও সরকারি সোলারে আমরা সেখান থেকে বিভিন্ন ফসল ফলাতে পারছি। আমি এখানে সরিষা চাষ করেছি। আগের পানির জন্য ফসলের ক্ষতি হত। সময় মতো পানি মিলত না। এখন সেই সমস্যা নেই। অল্প খরচে যখন খুশি পানি পাওয়া যাচ্ছে।’
কৃষক আতাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে ২ বিঘা জমিতে আলু ও শাক চাষ করি। আগে জমিগুলোতে কোনো আবাদ হতো না। এখন সৌরশক্তিতে গভীর নলকূপ চলার কারণে বিদ্যুৎ বা ডিজেল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া ইচ্ছেমতো পানি তোলা যায়।’ কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘১ বিঘা জমিতে আমি ফুলকপি লাগিয়েছি। কৃষকদের জন্য অনেক সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে সেচের খরচ বেড়েছে। আর সেচ ছাড়া কৃষি উৎপাদন অসম্ভব আমরা অল্প টাকায় পানি দিতে পারি।’ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) নীলফামারী জেলার সহকারী প্রকৌশলী মোসফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ৬ উপজেলায় ১০টি সোলার পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। জেলায় ২৫০ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। প্রায় ৫০০ কৃষককে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে উত্তরের কৃষি আরো বেশি সমৃদ্ধ হবে। একই সঙ্গে লাভবান হবেন কৃষক।’