কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আরো দুটি মৃত ‘মা কচ্ছপ’ ভেসে এসেছে, যে দুটির পেটে মিলেছে ১৮৫টি ডিম। এ নিয়ে গত ছয় দিনে সমুদ্র উপকূলে ভেসে এসেছে আটটি ‘মা কচ্ছপ’। যে আটটি কচ্ছপে পাওয়া গেছে ৭০০ ডিম। জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভেসে এসেছে ৩১টি মৃত ‘মা কচ্ছপ’।
সকালে সকালে উখিয়ার সোনাপাড়া সৈকতে সর্বশেষ দুটি মৃত মা কচ্ছপ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, এই দুটিও অলিভ রিডলি মা কচ্ছপ। পেটে ১৮৫টি ডিম পাওয়া গেছে। দুইটির সামনের ও পিছনের ফ্লিপারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। ডিম দিতে উপকূলে আসার সময় জালে বা অন্য কোনােভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এদের মৃত্যু হতে পারে। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি সৈকতের হিমছড়ি প্যারাসেলিয়ং পয়েন্টে ভেসে এসেছে ৯৫টি ডিম পেটে থাকা একটি মা কচ্ছপ। ১৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আবারও ভেসে আসে তিনটি মৃত মা কচ্ছপ, যার পেটে মিলেছে ৩১০টি ডিম। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে আবার একটি মৃত মা কাছিম ভেসে এসেছে, যা পেটে ছিল ৯০ টি ডিম। এর আগে ৩ দিনে উপকূলে দেখা মিলেছে তিনটি মৃত ডলফিন, একটি মৃত পরপইস ও একটি কচ্ছপ। এর মধ্যে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে একটি এবং ইনানী সৈকতে একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি হিমছড়ি সৈকতে মৃত ভেসে আসে আরো একটি ইরাবতী ডলফিন।
১৪ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে একটি মৃত পরপইস। ১৫ ফেব্রুয়ারি সৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে এসেছিল।
বোরি’র দেয়া তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সোনাদিয়া, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে অন্তত ৩১টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গেছে। শুধু মাত্র ছয় দিনে সৈকতে পাওয়া গেছে আটটি মৃত মা কচ্ছপ। এই সময়ের মধ্যে তিনটি মৃত ডলফিন, এবটি মৃত পরপইস ভেসে এসেছে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ।
তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে ভেসে আসা মৃত সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এটা কখনো হয়নি।
গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ-সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। এছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুই দিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।