‘অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকার বায়ু সমন্বিত প্রচেষ্টায় দূষণ রোধ করা সম্ভব

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বায়ুদূষণের তালিকায় গতকাল চতুর্থ অবস্থানে ছিল রাজধানী ঢাকা। বায়ু দূষণ সূচকে ঢাকার বাতাসের স্কোর গতকাল ছিল ১৬৫। সকাল ১০টার দিকে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দূষণের শীর্ষে থাকে ভারতের রাজধানী দিল্লি। দিল্লি স্কোর ১৯১ অর্থাৎ সেখানকারও অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। এই শহরটির স্কোর ১৬৮ অর্থাৎ সেখানকার বায়ুও অস্বাস্থ্যকর। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে উজবেকিস্তানের তাশখান্ত। আর পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন। স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয় বায়ুর মান। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বাস্তবতা হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের একার পক্ষে এসব কাজ করা সম্ভব নয়। বায়ুদূষণ রোধে সবাইকে সমন্বিতভাবেই করতে হবে। তা না হলে ফল পাওয়া যাবে না।

বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণে সরকারের একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তারপরও বাতাসে দূষণের মাত্রার কারণে রাজধানী ঢাকা কয়েক দিন ধরেই শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসছে। নতুনভাবে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে বায়ুমান নিয়ন্ত্রণে ১০০ দিনের মধ্যে ঢাকার আশপাশের সব ইটভাটা বন্ধ করা ছাড়াও বেশ কিছু বিশেষ উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বায়ুদূষণের মানমাত্রা উপস্থাপনকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের মানমাত্রা অনুযায়ী, গত সোমবার সকালে রাজধানী ঢাকা ছিল শীর্ষ অবস্থানে। এদিন মাত্রা ছিল ৩৩৫, রোববার সকালে যা ছিল ৩৯৪। এর আগের দিন শনিবার মাত্রা ছিল ২২৭। তিন দিনই দিনের একটা বড় সময়জুড়ে রাজধানী ঢাকা ছিল বায়ুদূষণের শীর্ষ অবস্থানে। বাংলাদেশ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০২২ সরকারের জারি করা এই বিধিমালা অনুযায়ী দূষণ নিয়ন্ত্রণের অভিযানগুলো বাস্তবায়নের কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এই কমিটির সভাপতি হচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জানা যায়, ২৭ সদস্যের এই কমিটি এ পর্যন্ত দুটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশি কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়নে কাজ করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার একটি খসড়া তৈরি কাজ চলছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে এই কাজ চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যেসব কাজ হচ্ছে, সেগুলো আরও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার জন্যই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

সাবের হোসেন চৌধুরী পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০০ দিনের বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেওয়ার ঘোষণা দেন। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে আছে বায়ুদূষণের বেশ কিছু কার্যক্রম আছে। যেমন- ১০০ দিনের মধ্যে ঢাকার আশপাশের ৫০০ ইটভাটা বন্ধ করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের অভিযানের মাধ্যমে বেশ কিছু ইটভাটা বন্ধ করলেও পুরোপুরি সব বন্ধ করতে পারছিল না। এই ঘোষণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী এই ইটভাটা বন্ধ হলে দূষণের বড় অংশ কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবেশমন্ত্রীর ১০০ দিনের মধ্যে ইটভাটা বন্ধের পাশাপাশি ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহার বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাস্তা বাদে অন্য নির্মাণকাজে ইট বাদ দিয়ে ব্লক ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে অধিদপ্তর।

বায়ুদূষণের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের অভিযান প্রতিদিনই হচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে নিয়মিত। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুর মান দেখার জন্য এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে ঢাকার বায়ুর মান দেখা সম্ভব। অধিদপ্তরের ৩৩টি স্টেশনের মধ্যে ১৬টি স্টেশনের ডাটা নিয়ে রিয়েল টাইম (এখন কী অবস্থা) বায়ুর অবস্থা দেখা সম্ভব। সরকারের এসব উদ্যোগের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এয়ার কোয়ালিটি) মো. জিয়াউল হক জানান সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা সরকারের নির্দেশে জোরেশোরেই কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি বায়ুদূষণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্মাণকাজে ইটের ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও সেটি করা যাচ্ছে না। ২০২৬ সালের মধ্যে সব সরকারি নির্মাণকাজে ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারের বিষয়ে কাজ করার লক্ষ ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে।

সরকারি এত উদ্যোগের পরও কেন কমছে না বায়ুদূষণ, জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ মো. কামরুজ্জামান জানান, বায়ুদূষণ নিয়ে নানা কাজের কথা বললেও মাঠের কাজটা জরুরি। সেই কাজটাই হচ্ছে না। যেসব কারণে বাতাসে দূষণ হয়, সেটার জন্য যেসব অধিদপ্তর বা সংস্থা বা মন্ত্রণালয় দায়ী, তাদের সঙ্গেই পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে বসতে হবে। যেমন- রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে, সেজন্য যদি ওয়াসা করে, তাহলে ওয়াসার সঙ্গে বসেই বিষয়টি সমাধান করতে হবে, যাতে তারা খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়।

একইভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সেই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এভাবে বায়ুদূষণের জন্য দায়ী বিষয়গুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি দায়ী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বসে সমাধান করতে হবে।