৯ মাস ধরে অকেজো ইবির ৪২ লাখ টাকার দুটি লিফট

ভোগান্তির শিকার শিক্ষকসহ আড়াই হাজার শিক্ষার্থী

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নাজিম হোসেন ইবি

প্রায় ৯ মাস ধরে অকেজো কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ব্যবসায় অনুষদের দুটি লিফট। জানা যায় গত ৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ ভবনে উদ্বোধন করা হয় এই দুটি লিফট। তবে লিফট দুটি চালুর দুই সপ্তাহের মধ্যেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ, চালু অবস্থায় ওভার লোড ও টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বিভিন্ন সময় লিফটের ভেতরে আটকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেও একদিন লিফটে আটকে পড়েন। এ সময় লিফটের দুই পাশ টেনে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওভার লোড কন্ট্রোল ও অটোমেটিক উদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেন্সর না থাকার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে জানা যায়।

তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনে এই প্রথম দুটি লিফট বসানো হয়েছে। ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার সম্প্রসারণের সময় লিফট দুটির অনুমোদন দেয়া হয় এবং এর বাজেট ধরা হয় ৪২ লাখ টাকা। কিন্তু ‘পিডব্লিউডি’ শিডিউল অব রেটস-২০১৮ অনুযায়ী বাজারের সর্বনিম্ন তালিকাভুক্ত ‘সি ক্যাটাগরির’ লিফটের মূল্য তালিকায় রয়েছে স্থাপিত লিফট দুটি। তালিকায় ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উল্লিখিত প্রতিটি লিফটের মূল্য রয়েছে ৩১ লাখ ও ‘এ’ ক্যাটাগরির ৪০ লাখ টাকা করে। পরে প্রতি তলা অনুযায়ী বাড়ানো হয় লিফটের দাম। ‘সি’ ক্যাটাগরির এলজিএস, গোল্ড স্টার, সিগমাসহ চারটি ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করে লিফট বসানোর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য থেকে সিগমা ব্র্যান্ডের কোরিয়ান দুটি লিফট গত ৩ মে স্থাপন করে সনেট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ২৫ লাখ টাকা। তবে একাডেমিক ভবন হিসেবে এর ধারণক্ষমতাও খুবই কম দেওয়া হয়েছে। সাধারণভাবে প্রতি লিফটে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী ওঠার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন যাবত লিফট দুটি বন্ধ থাকার কারণে ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সিঁড়ি দিয়ে উঠানামায় ভোগান্তির শিকার শিক্ষকসহ প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী। এ ক্ষেত্রে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।

লিফট চালু করতে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই মাস আগে আমি প্রশাসন বরাবর একটি চিঠি দিয়েছিলাম। প্রশাসন আশ্বস্ত করেছিল খুব শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়েছিল কিন্তু দুই মাস পার হলেও কোনো ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে প্রকৌশল অফিসের প্রধান প্রকৌশলী এ. কে. এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘লিফট চালু বিষয়ে প্রশাসন থেকে নোটিশ এসেছিল। অফিস থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মেকা:) মোঃ আব্দুল মালেক মিয়াকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়ে। বিস্তারিত তিনি বলতে পারবেন।’

প্রকৌশল অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মেকা:) মোঃ আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, ‘লিফট সংস্কার করে পুনরায় চালু করার বিষয়ে আমরা প্রশাসন থেকে নোট পেয়েছিলাম কিন্তু লোকবল সংকটে কাজ শুরু করতে পারিনি। অফিস থেকে উপাচার্য বরাবর নোট পাঠিয়েছি। সেখানে কমপক্ষে দুইজন লিফট পরিচালনার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে এখনো কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। লোকবল পেলেই আমরা তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করবো।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, এটা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদত হোসেন আজাদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এগুলো জরুরি ফাইল তাই ফাইলগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তর দায়িত্বে নিয়ে আসলে দ্রুত কাজ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা আনেনি, এই কারণে আটকে আছে। যদি এটা নিয়ে কোনো আন্দোলন হতো, তাহলে কিন্তু তারা নিজ দায়িত্বে ফাইল নিয়ে আসত।