শেরপুর সদরে ছাগলের পেট থেকে জন্ম নিয়েছে গরুর বাছুরসদৃশ এক প্রাণী। তবে জন্ম নেওয়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই বাচ্চাটি মারা যায়। ‘ছাগলের পেট থেকে গরুর বাচ্চা হয়েছে’ এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত উৎসুক মানুষ প্রাণীটি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন ছাগলের মালিকের বাড়িতে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেরপুরের একটি কমিউনিটি গ্রুপে এ সংক্রান্ত পোস্ট হওয়ার পর থেকে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামে। তবে মারা যাওয়া প্রাণীটি আদৌ গরুর বাছুর নাকি বড় আকারের ছাগলের বাচ্চা ছিল, সেটি পুরোপুরি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে ছাগলের পেট থেকে বাছুর হওয়া সম্ভব নয়। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার রাতে সদর উপজেলার কুসুমহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী মো. আবু বকর সিদ্দিকের পালিত একটি ক্রসবিডিং ছাগলের দুটি বাচ্চা হয়। এর মধ্যে একটি স্বাভাবিক ছাগলের বাচ্চার মতো হলেও আরেকটি বাচ্চা দেখতে অনেক বড়সড় ও বাছুর আকৃতির মতো দেখা যায়। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আশপাশের লোকজন বাচ্চাটি দেখার জন্য আবু বকর সিদ্দিকের বাড়িতে ভিড় করেন। উৎসাহী কেউ কেউ ছবি ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে সেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ছাগলের পেট থেকে জন্ম নেওয়া গরুর বাছুরের মতো দেখতে প্রাণীটি। ছাগলের মালিক মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, এই ছাগলটি এর আগে আরও দুইবার স্বাভাবিক ও সুস্থ বাচ্চা প্রসব করেছে। তবে এবার দুটি বাচ্চা প্রসব করলে একটি বাচ্চাকে ব্যতিক্রম ও বড় দেখা যায়। অনেকেই বাচ্চাটিকে দেখে বলছেন গরুর বাচ্চা, আবার অনেকেই বলছেন ছাগল। কেউ কেউ ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটা তিন ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছে। পরে আমরা সেটি মাটিচাপা দিয়ে দিছি। আবু বকরের প্রতিবেশী ষাটোর্ধ জামিরন বেগম বলেন, আমরা নিজের চোখে দেখছি, বাচ্চাটিকে একবারে গরুর মতোই দেখা গেছে। নাক, কান, মুখ ও লেজ গরুর মতোই। বাবারে জীবনে এমন বাচ্চা দেখিনি। স্থানীয় যুবক সিয়াম বলেন, আমাদের পাঁচ মাসের একটি গরুর বাচ্চা মারা গিয়েছিল। ওই বাচ্চা আর এই ছাগলের বাচ্চা দেখতে একই রকম মনে হয়। প্রায় বেশিরভাগ মানুষই বলছে এটি বাছুর। একই গ্রামের ছামিউল আলম বলেন, বাজার থেকে বাড়িতে এসে শুনি ছাগলের পেট থেকে গরুর বাচ্চা হয়েছে। পরে বকর কাকার বাড়িতে গিয়ে দেখি দুইটা বাচ্চা হইছে। একটা ছাগলের বাচ্চা, আরেকটা গরুর বাছুরের মতো দেখা যায়। পরে ছবি আর ভিডিও করে ফেসবুকে ছাড়ছি। এরপর অনেকেই এসে বাচ্চাটিকে দেখে গেছে। ষাটোর্ধ আব্বাস আলী বলেন, এটি দেখতে গরুর বাছুরের মতো। প্রাণীটির শরীরে কোনো লোম নেই। একটি কান ও একটি বড় চোখ রয়েছে। মুখ, কান, লেজ ও চারটি পা ও খুর দেখতে অনেকটা গরুর এঁড়ে বাছুরের মতো। শেরপুর সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাহানা আখতার বলেন, ছাগলের পেট হলে ছাগলের বাচ্চাই জন্ম নিবে। তবে হরমোনজনিত কারণে এ ছাগলটি গরুর বাছুরের মতো দেখতে বাচ্চা প্রসব করেছে। আর জেনেটিক সমস্যা হলে ছাগলের অন্য বাচ্চাটিরও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেলেনা বেগম জানান, এটি গরুর বাছুর নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি হওয়ার সুযোগই নেই। তবে হরমোনজনিত কারণে বাচ্চার আকৃতির পরিবর্তন হতে পারে।