চট্টগ্রামে অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধে কঠোর অবস্থানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা সম্বলিত চিঠি ১১ জেলার সিভিল সার্জনের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংকের কার্যক্রম ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তালিকায় ১১৮টি হাসপাতাল ও ১২২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্সবিহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় অনিবন্ধিত হাসপাতালের সংখ্যা ৬টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১১টি। বর্তমানে হাসপাতাল ব্যবসা শুধু বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কতটুকু লাভবান হবে এ বিষয়টি লক্ষ্য রেখে চালু করা হয়। অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্ট দেওয়াসহ নানা অভিযোগ আছে এই সেক্টরে। এমন পরিস্থিতি সামনে এলে চলে অভিযান। কিন্তু জরিমানা দিয়েই এসব প্রতিষ্ঠান আবারও শুরু করে ব্যবসা। তবে এবার কঠোর হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেলা-উপজেলায় অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ অভিযান। ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ইফতেখার আহমেদ জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা তৈরি করে সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যেসব প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স ছাড়াই সেবাদান কার্যক্রম চলছে, তাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে জেলা ও উপজেলায় অবৈধভাবে চলমান হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মত ভুক্তভোগীদের। জেলায় স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৮০টিরও বেশি। শুধু লাইসেন্স কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র নয়, অনুমোদন থাকা অনেক হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের নিয়োগপত্রও নেই। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা না থাকা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের লাইসেন্স, প্যাথলজিস্ট, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের নামও নেই অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে।
লাইসেন্স না থাকাসহ নানা অভিযোগে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। এগুলো হলো- অগ্রণী ল্যাব ও ডায়গনস্টিক সেন্টার, সেবা ডেন্টাল অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার, নিউ চাঁদের আলো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ন্যাশনাল চক্ষু হাসপাতাল। সূত্র জানায়, পটিয়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডেন্টাল কেয়ার। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ৩০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নিবন্ধনহীন। আবার নিবন্ধন থাকলেও নবায়ন করা হয় না। এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে নোংরা পরিবেশ, অদক্ষ নার্স ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে চিকিৎসা। একই চিত্র বোয়ালখালীতেও।
আনোয়ারায় বাধা ছাড়াই চলছে ১৮টিরও বেশি অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। বাঁশখালীতে নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বাঁশখালী পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতাল, মাতৃসদন হাসপাতাল, সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মিনি ল্যাব, প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।
হাটহাজারীতে ১২টি ডায়গনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অভিযানে বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি, মিলেছে নানা অনিয়ম। ফটিকছড়ির তকিরহাটে এক বছর ধরে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই অবৈধভাবে চলছিল মডেল ল্যাব নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। খবর পেয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি ল্যাবটি বন্ধ করে দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আরেফিন আজিম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, আগামীকাল থেকে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানে হাসপাতালে ১০টি নির্দেশনার বাস্তবায়ন না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।