ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মানবাধিকার কমিশনের ক্ষোভ

লাগামহীন নৈরাজ্যে নিষ্ঠুর হয়েছে চিকিৎসা খাত

লাগামহীন নৈরাজ্যে নিষ্ঠুর হয়েছে চিকিৎসা খাত

সম্প্রতি ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, লাগামহীন নৈরাজ্যে নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত করছে চিকিৎসা খাত।

কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন- কমিশন লক্ষ্য করছে যে, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুল চিকিৎসা, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ১০ বছর বয়সি আহনাফ তাহমিদকে সুন্নতে খতনা করাতে নিলে লোকাল এনেস্থেশিয়া না দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত জেনারেল এনেস্থেশিয়া দেওয়াতেই শিশুটির মারা গেছে বলে অভিযোগ করে শিশুটির পরিবার।

কিছুদিন আগেও রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আরেক শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। এছাড়া, গত ১৬ জানুয়ারি বরগুনার বামনায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি নারী মেঘলাকে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনভিজ্ঞ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সবুজ কুমার দাসসহ পাঁচে থকে ছয়জন মিলে তার অস্ত্রোপচার শুরু করেন।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, সেখানে মেঘলার পেটে অস্ত্রোপচারের প্রায় ২ ঘণ্টা পর অবস্থা বেগতিক দেখে জীবিত নবজাতক সন্তানকে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দ্রুত বরিশালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে পথে তাকে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কমিশনের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিহত মেঘলার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

এছাড়াও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর ছেলেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা চরম নির্যাতন করে মর্মে জানা যায়। অন্যদিকে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসকদের ফি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করানোর জন্য ফি দিতে গিয়ে রোগীদের প্রচুর অর্থ খরচ করতে হলেও আশানুরূপ চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, আস্থাহীনতার কারণে বিপুলসংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে গমন করছে, যার ফলে বর্তমান সংকট সময়েও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও বেহাত হচ্ছে।

সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনা কমিশন লক্ষ্য করছে। এসব ঘটনা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। এর ফলে স্বাস্থ্য খাতটি চরম নৈরাজ্য/নিষ্ঠুরতার খাত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। দেশ যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে স্বাস্থ্য খাতের চরম নৈরাজ্য কোনভাবেই প্রত্যাশিত কিংবা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় মনিটরিংয়ের অভাবে যত্রতত্র অনুমোদনহীন হাসপাতাল/ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও চিকিৎসক এবং নার্সদের কোনো ন্যূনতম যোগ্যতা ছাড়াই লাগামহীনভাবে অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসা কর্মকাণ্ড চলছে। অনতিবিলম্বে এসব অনুমোদনহীন হাসপাতাল চিহ্নিত করে বেআইনি ও হঠকারিতামূলক চিকিৎসা কর্মকাণ্ড বন্ধ করার পাশাপাশি, দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানায় কমিশন। পাশাপাশি, শিশু আয়ান, আহনাফসহ ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নিহত রোগীদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আহ্বান জানায় কমিশন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত