পাকিস্তানের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে পিটিশন জমা দিয়েছে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। গত শুক্রবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে পিটিআই এ-সংক্রান্ত একটি পিটিশন জমা দিয়েছে। পিটিশনে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে মোট ১৮০টি আসনে জয়ী হয়েছে পিটিআই। কিন্তু কারচুপি ও কারসাজির মাধ্যমে মাত্র ৯২টি আসনে পিটিআই প্রার্থীদের জয়ী দেখানো হয়েছে। দলটিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে এই ‘ডাকাতি’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে পিটিশনে। সর্বোচ্চ আদালতে পিটিশন জমা দেওয়ার তথ্যটি শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন পিটিআইয়ের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা শের আফজাল মারওয়াত। তিনি আরো জানিয়েছেন, পিটিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজার নিয়োগকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়েছে পাকিস্তানে। ১১ ফেব্রুয়ারি সেই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মোট আসনসংখ্যা ২৬৬টি, তার মধ্যে নির্বাচন হয়েছে ২৬৫টি আসনে। কোনো দল যদি সরকার গঠন করতে চায়, তাহলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অন্তত ১৩৩টি আসনে সেই দল বা জোটকে জয়ী হতে হবে। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে কারাবন্দি নেতা ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআই ৯২টি আসন। পিটিআইয়ের পর এই তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) ৭৫টি আসন, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি আসন, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ১৭টি আসন, জামায়াতে উলামায়ে ইসলামণ্ড ফজলুর (জেইউআইএফ) চারটি আসন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯টি আসন।
অর্থাৎ, কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আসন পায়নি। এই অবস্থায় জোট সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয় পিএমএলএন এবং পিপিপির মধ্যে। ১২ দিন ধরে আলোচনার পর ঐকমত্যে পৌঁছায় পিএমএলএন এবং পিপিপি; সিদ্ধান্ত হয় পিএমএলএনের চেয়ারম্যান শেহবাজ শরিফ পাকিস্তানের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন, আর রাষ্ট্রপতি হবেন পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিতা ও দলটির কো চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে কার্যত সরকার গঠনের সম্ভাবনা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে পিটিআইয়ের। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে পিটিশন জমা দিয়েছিলেন আলী খান নামে অবসরপ্রাপ্ত এক পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা। গত বুধবার সেই আবেদনের ওপর শুনানির দিনও নির্ধারণ করেছিলেন আদালত। কিন্তু সেদিন আবেদনকারী আদালতে উপস্থিত না থাকায় সেই পিটিশন বাতিল করে দেন সুপ্রিমকোর্ট। সেই সঙ্গে আলী খানকে ৫ লাখ রুপি জরিমানাও করেন সর্বোচ্চ আদালত।
সূত্র : প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া
ইমরান খানের চিঠিকে পাত্তা দিল না আইএমএফ
নতুন করে ঋণের অর্থছাড়ের আগে পাকিস্তানের নির্বাচনি ফলাফলের ওপর অডিট পরিচালনার অনুরোধ জানিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে চিঠি দিয়েছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিন্তু তার সেই অনুরোধকে পাত্তা দিচ্ছে না আইএমএফ। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। খবর জিও নিউজের।
গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের ডিরেক্টর কমিউনিকেশন জুলি কোজ্যাক জানান, সংস্থাটি স্ট্যান্ডবাই অ্যারেঞ্জমেন্টের অধীনে গত ১১ জানুয়ারি মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারে নিয়ে গেছে। এই কর্মসূচি পাকিস্তানের ‘অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য’ আইএমফের প্রচেষ্টার অংশ বলে জানিয়েছেন তিনি। এর আগে, পাকিস্তানের জন্য নতুন ঋণ কর্মসূচি অনুমোদনের আগে আইএমএফ’কে গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ফলাফল অডিট করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন পিটিআই’র প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান।