জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা
‘প্রক্সিকাণ্ডে’ আটক সাত
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শ্রুতিলেখনের মাধ্যমে প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগে জালিয়াত চক্রের দুই সদস্য ও পাঁচজন ভর্তিচ্ছুসহ সাতজনকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রবিবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদ ও বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটভুক্ত ভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটে।
জালিয়াত চক্রের আটককৃত সদস্যরা হলেন- সাগর হোসেন রোহান ও মাহমুদুল হাসান শাওন। জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া ভর্তিচ্ছুরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন, রাজু আহমেদ, মো: টুটুল হাসান, মো: মেহেদী হাসান, আওয়াল হোসেন আরাফাত।
আটক সকল ভর্তিচ্ছু ও জালিয়াত চক্রের সদস্য শাওন দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতী। জালিয়াত সাগরকে আশুলিয়ার নির্বাহী হাকিম মো: আশরাফুর রহমানের ভ্রাম্যমাণ আদালত ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা করেছে। আটক ভর্তিচ্ছুদের সকল পরীক্ষা বাতিল করা হলেও ‘মানবিক’ কারণে বিচার করেনি আদালত। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাওনকে ছাত্র-শৃঙ্খলা অধ্যাদেশে বিচারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাকেও ‘মানবিক’ দিকবিবেচনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিরাপত্তা শাখা ও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল হুদা সাকিবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৃষ্টিশক্তিহীন একজন ভর্তিচ্ছুর জন্য শ্রুতি লেখক হিসেবে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ১৩০ নং কক্ষে (গ্যালারি) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন রোহান। শ্রুতিলেখক হিসেবে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসার নিয়ম থাকায় রোহানের শারীরিক গঠন ও মুখাবয়ব দেখে স্কুল শিক্ষার্থী হিসেবে তাকে সন্দেহ হয় অধ্যাপক নুরুল হুদা সাকিবের। পরীক্ষা শেষে উপস্থিত জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমে নিজেকে স্কুল শিক্ষার্থী দাবি করলেও পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে স্বীকার করেন। পাশাপাশি-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করেন। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখাকে অবহিত করার পর অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বাকিদের নামও বের হয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে তারাও অসদুপায় অবলম্বনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, দায়িত্বরত শিক্ষক কর্তৃক অবগত হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে সকলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও প্রমাণ মিলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান এ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা যাদের বিরুদ্ধে শ্রুতিলেখক পরিবর্তন করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অভিযোগ পেয়েছি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী শাস্তি দিয়েছি। যারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে নিয়ম মোতাবেক পদক্ষেপ নেব।’ কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এ সংক্রান্ত তথ্য এখনো আমার কাছে না পৌঁছায় কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা এবার প্রথম। আমরা আজকে নতুন অভিজ্ঞতার স্বীকার হলাম। বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলমান থাকবে। সামনে অধিকতর সতর্ক থাকবো। এছাড়াও এদিন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এক স্কাউট সদস্যকে আঘাতের ঘটনায় সাজিদ হাসান নামে আরো এক ভর্তিচ্ছুর ‘সি’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।