পরিবেশ সংরক্ষণে আইনের সঠিক প্রয়োগে মাঠেঘাটে ছুটে বেড়াচ্ছেন কক্সবাজারের রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার। তার এমন ভূমিকায় রামু উপজেলায় পরিবেশ ধ্বংসকারী অপরাধীরা কোনঠাসা হয়ে পড়ায় পরিবেশ অপরাধ অনেকটা কমে এসেছে। এতে পরিবেশবাদীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে বেড়েছে ভূমি সেবাও। তার পরিবেশ রক্ষার কার্যক্রমসহ ভূমি সেবায় মানুষ মুগ্ধ। অনেকেটা প্রসংশায় পঞ্জমুখ এসিল্যান্ড নিরুপম মজুমদার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ মোতাবেক মাত্র ১০ মাসে ৪১টি অভিযান পরিচালনা করেছেন রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার। অভিযানে ৬৫টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজনকে ১৫ দিন ও একজনকে ৩০ দিন করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ১৯ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এ ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩-এ ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এ ১০ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। গেল ২০২৩ সালের মে থেকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ মাসে এ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।
ভূমি অফিসেও পাল্টে গেছে আগের চিত্র
রামু উপজেলা ভূমি অফিসেও তার প্রচেষ্টায় পাল্টে গেছে চিত্র। ফিরেছে শৃঙ্খলা। অনেকটা সেবার মান বেড়েছে। কমেছে হয়রানিও। ভূমিসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতি সপ্তাহে সোম ও বুধবার গণশুনানির দিন নির্ধারিত রয়েছে। ওই দিনে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনেন এসিল্যান্ড।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অন্যদিনের চেয়ে সোম ও বুধবার এসিল্যান্ড অফিসে সেবাপ্রার্থীর ভিড় বেশি। একের পর এক মনোযোগ সহকারে অভিযোগ শুনছেন এসিল্যান্ড। অনেকেই ভালো সেবা পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, সাধারণ মানুষের হয়রানি কমাতে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তের ভূমিবিষয়ক সেবা অর্থাৎ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ই-নামজারীর আবেদনসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়।
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান অনলাইনে ডি.সি.আর ফি এবং বর্তমান ভূমি উন্নয়ন কর সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে গ্রহণ করা হয়। অনলাইনে সৃজিত খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সরবরাহ করা। গণশুনানি, আপত্তি বা আপিল দাখিল ও নিষ্পত্তির কার্যক্রম চলমান আছে রামু ভূমি অফিসে। সেবা গ্রহীতাদের সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব সরাসরি উত্তর প্রদানের জন্য সেবা বুথে একজন কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন।
ভূমি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া ও ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ই-নামজারী, ই-পর্চা, ডিজিটাল রেকর্ডরুম থেকে মৌজা ম্যাপ ও পর্চা ডাকযোগে সরবরাহসহ ভূমি-সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। এতে ভূমি সেবা সারা দেশের ন্যায় রামুতে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন বলে জানিয়েছেন রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার। রামু উপজেলায় অনলাইনে ভূমি সেবায় কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তারা এ কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে জমিজমার যাবতীয় কাজ কর্ম নিয়ে ছুটে আসছে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস সমূহে। ঘরে বসে সেবা পেতে ১৬১২২ নাম্বারে কল করে সেবা নিতে শুরু করেছেন তারা। এনআইডিসহ জমির তথ্য প্রদান, কল সেন্টার কর্তৃক আবেদন দাখিল, মোবাইলে টোকেন নাম্বার প্রাপ্তি ও টোকেন নাম্বারে মোবাইলে ফি প্রদান, মোবাইলে আবেদন, আইডি ও ডেলিভারির তারিখ প্রাপ্তি, ডাক বিভাগের মাধ্যমে আবেদনকারীর ঠিকানায় খতিয়ান সরবরাহ, খতিয়ান (পর্চা), জমির ম্যাপ সংক্রান্ত যে কোন সেবার জন্য ১৬১২২ নাম্বারে কল করাসহ নানা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ই নামজারি-সংক্রান্ত তথ্যাদি ১৬১২২ নাম্বারে কল করে পাওয়া যাচ্ছে। সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বিশেষ কিছু তথ্য। যার স্বচ্ছতা এতো ছিল না বহুদিন ধরে। এর মধ্যে মাত্র ২০ টাকায় ফরম পূরণ, নোটিশ জারীর ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন ফি ১ হাজার টাকা এবং মিউটেশন খতিয়ান ফি ১০০ টাকা মোট খরচ পড়ছে ১ হাজার ১৭০ টাকা।
রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার বলেন, ভূমিসেবা অনলাইনে শুরু হওয়ায় সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে দারুণ আগ্রহ দেখা দিয়েছে। দালালমুক্ত অবস্থায় নিজেরাই নিজেদের যাবতীয় কাজ সেরে নিতে ভূমি অফিসে আসছে। এতে সময় সাশ্রয় হচ্ছে, খরচ কমছে, হয়রানি বন্ধ হয়েছে তাদের। সম্পূর্ণ দালালমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ভূমি অফিসসমূহ। এরপরও কেউ ভূমি অফিসের কারও দ্বারা হয়রানির শিকার হলে আমার সাথে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরোপণ বলেন, বর্তমান সরকার ভূমিসেবাসমূহকে একটি প্লাটফরমে আনার চিন্তা করছে। রেজিস্ট্রেশন, জরিপ, নামজারিসহ প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম যদি এক প্ল্যাটফর্মে আনা যায়, তবে জন ভোগান্তি অনেকাংশে কম যাবে, সুফল পেতে শুরু করবে মানুষ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট সেবাদান অত্যন্ত জরুরি, আর তা শুরু হয়েছে অনলাইনে ভূমি সেবাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে। সেবা গ্রহীতা দেশে বা বিদেশে অবস্থান করলেও সেখান থেকেই ই-সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। সীমানাবিরোধ শূন্যের কোঠায় আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ডিজিটাল জরিপের কারণে ভবিষ্যতে মানুষ এর সুফল পাবে। সচেতন হতে হবে মানুষকে।