বিশ্বের ১১০ দেশকে পেছনে ফেলে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া বাংলাদেশি হাফেজ বশির আহমেদকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা দিয়েছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গতকাল বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে তাকে এই সংবর্ধনা দেয় সংগঠনটির নেতারা।
অনুভূতি প্রকাশ করে হাফেজ বশির বলেন, আমি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইরানে গিয়ে প্রথম হয়েছি। এর আগে আমি আলজেরিয়ায় গিয়ে তৃতীয় হয়েছিলাম। আমাকে ছাত্রলীগ সংবর্ধনা দিয়েছে, এজন্য আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, আমরা চাই বশিরের মতো মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যে যেই অঙ্গনে পড়াশোনা করুক না কেন, তারা যেন বাংলাদেশকে আরো উচ্চাসনে আসীন করতে পারে, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে, গৌরবান্বিত মুকুট বয়ে নিয়ে আসবে। বশির আহমেদের মতো যারা ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান, ইসলামের যে প্রকৃত শিক্ষা অর্থাৎ সব ধর্মের প্রতি সহানুভূতি ও সকল মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে জীবনযাপনের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে চান ছাত্রলীগ সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইরানের বৈশ্বিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ১১০টি দেশকে পেছনে ফেলে আমাদের লাল সবুজের পতাকাকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন হাফেজ বশির আহমাদ। আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা ও বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির প্রধান কর্মকাণ্ডের মধ্যে যে কালচারাল গ্যাপ, পার্থক্য ছিল সেটা ঘুচিয়ে দেয়ার জন্য আমরা এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছি। শুধু তাই নয়, আমরা মাদরাসা ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এই পদটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বপ্রথম যুক্ত করেছি।
‘আমরা মনে করি মাদরাসায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে যারা নানাভাবে আমাদের দেশে অবদান রাখে; আমাদের অর্থনীতিতে, নীতিনৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করে, আধ্যাত্মিকভাবে বাংলাদেশের আত্মাকে শক্তিশালী করার জন্য মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কাজ করে এবং সেই জায়গায় আমাদের সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বুনিয়াদকে শক্তিশালী করতে পারি সেই লক্ষ্যে কিন্তু আমরা কাজ করছি।’ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাদ্দাম বলেন, আমরা সবাই একসাথে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করব। মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যেখানেই তাদের প্রাপ্য অধিকারের জন্য লড়াই করবে; তারা যাতে মানসম্পন্ন বাজেট পায়, মেইন শিক্ষাধারার সাথে যাতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা আগামীতেও কাজ করার জন্য প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করছি।
ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমরা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি বক্তৃতা প্রতিযোগিতা করেছি। আগামীতেও যেন আমরা তাদের সঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষার সংযোজন তৈরি করতে পারি। তাদের সঙ্গে যেন কর্মসংস্থান তথা স্মার্ট অ্যামপ্লয়মেন্টের ব্যবস্থা করতে পারি, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করবে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে সামনের দিকেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কাজ করে যাবে।
সম্প্রতি ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশি কিশোর হাফেজ বশির। প্রতিযোগিতায় ৩০ পারা কোরআন গ্রুপে শতাধিক দেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে বশির প্রথম হয়।
ইরানের অনুষ্ঠানের ১০ দিন আগে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছিল বশির। এছাড়া ২০২২ সালে হুফফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশনের প্রতিযোগিতায় বশির প্রথম স্থান অর্জন করে।
মাত্র পাঁচ মাসে হিফজ শেষ করেছিল বশির। বশির ঢাকার মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার শিক্ষার্থী। হাফেজ বশির আহমাদ হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বেগুনাই গ্রামের মো. আব্দুর রশিদ চৌধুরী ও বুশরা চৌধুরী দম্পতির ছেলে।
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের মাদরাসাবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় হাফেজ বশিরের শিক্ষক নেছার উদ্দিন নাছিরী বক্তব্য রাখেন। এ সময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।