চলতি মৌসুমে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে চেউয়া শুঁটকির ধুম পড়েছে। নদীতে ধরা পড়া চেউয়া মাছ শুঁটকি তৈরির মাধ্যমে জেলেদের নতুন আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও। এ বছর চেউয়া শুঁটকির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে শতকোটি টাকার। অন্যদিকে লাভজনক হওয়ায় এই শুঁটকির কদর এখন তুঙ্গে। এখানে রয়েছে এর বিপুল সম্ভাবনা। কিন্তু আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে এখানকার চরাঞ্চলে তৈরি শুঁটকির অধিকাংশই মৎস্য ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। জানা গেছে, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চারপাশে রয়েছে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর। দ্বীপের জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, তবে অন্য মাছের তুলনায় এবার প্রচুর পরিমাণে চেউয়া মাছ ধরা পড়ছে। বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলাটির জঙ্গলিয়া ঘাট, মোহাম্মদপুর ঘাট, মুক্তারিয়া ঘাট, কাঁটাখালি ঘাট, কাদিরাঘাট ও রহমত বাজার ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে প্রতি মৌসুমে চেউয়া শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলে। প্রতি বছরের বাংলা অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু হওয়া এ চেউয়া মাছের মৌসুম চলে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তাদের হাত ধরে দেশে অর্ধেক চেউয়া মাছের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এ দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার লোকের হাত ধরে তৈরি হওয়া এই চেউয়া শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। যা দিয়ে তৈরি হয় মাছ ও মুরগির খাদ্য (ফিড)। মাছ ও মুরগির খাদ্য (ফিড) উৎপাদনে ব্যবহৃত চেউয়া শুঁটকির বেশিরভাগই যায় এই দ্বীপ থেকে। নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের নবির উদ্দিন মাঝি বলেন, গত বছর টোটালই চেউয়া মাছ পাই নাই। যারা দূরের তারা কিছু পাইছে। এবার যদি আল্লাহ দেয় তাহলে আমাদের ভাগ্য খুলবে। তবে এবার চেউয়া মাছ পাওয়া শুরু হয়েছে। এর আগের বছর ভালো মাছ পাইসি। আমার হাতে নয় লাখ টাকার মাছ ধরা পড়েছে। একেকজন জেলে ৭০ হাজার টাকার মাছ পেয়েছে। আবদুল খালেক বলেন, প্রথম কাটালে আমরা ভালো মাছ পেয়েছি। এবার ভালো মাছ পাবো আশা করি। সামনের কাটালে যা পাবো সেগুলো খাওয়ার জন্য হবে। বড় বড় সাইজ। আমরা মাছ কম হলে নিয়ে আসি আর বেশি হলে চৌধুরী খালে শুকাতে দেই। এবার মণ ৩২০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জেলা মনির উদ্দিন বলেন, আল্লাহ তো দিতে পারেন। অন্য কোনো ইচ্ছা নাই। বউ বাচ্চা নিয়ে ভাত খেতে পারলেই হয়। তবে এবার যদি ভালো চেউয়া মাছ ধরা পড়ে তাহলে একটা ঘর করার ইচ্ছা আছে। পাইকারি বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, নিঝুমদ্বীপের অধিকাংশ মানুষ মাছের উপর নির্ভরশীল। নদীতে মাছ ভালো পড়লে তাদের ভাগ্য বদল হয়। গেছে বছর তেমন ইলিশ পাওয়া যায় নাই। এখন চেউয়া শুঁটকির সিজন চলে। প্রথম থেকে চেউয়া মাছ দেখা দিয়েছে। আশা করি এবার চেউয়া শুঁটকি উৎপাদন বেশি হবে। বেশি হলে তাদের গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে। মিলাদ মাছি নামের আরেক চেউয়া শুঁটকির ব্যবসায়ী বলেন, গতবছর চেউয়া মাছের মৌসুমে কম চেউয়া পাওয়া গেছে। এবার যেমন লক্ষ্য দেখা যাচ্ছে তাহলে ভালোই মাছ পাওয়া যাবে। লক্ষ্য অনুযায়ী মাছ হলে ৫০ থেকে ১০০ কোটির চেউয়া বিক্রি হবে বলে আশা করছি। নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. কেফায়েত হোসেন বলেন, এবছর চেউয়া মাছের ফসল ভালো দেখা যাচ্ছে। এই কাটালে প্রায় ৫ কোটি টাকার চেউয়া শুঁটকি ধরা পড়েছে। সামনে দুইটা ধাপ আছে, আশা করি প্রচুর চেউয়া মাছ ধরা পড়বে। তাহলে জেলেদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। হাতিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাজু চৌধুরী বলেন, এবছর চেউয়া মাছের যে উৎপাদন আশা করি তা গত বছরের থেকেও ভালো হবে। আমরা চেষ্টা করেছি এই মাছের প্রজনন যেনো সঠিকভাবে হয়। আশা করি এ বছর ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে। আর বাস্তবতা দেখেছি চেউয়া মাছের পরিবহনের জন্য সড়কগুলো ভালো না। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলেছেই যাতায়াত ব্যবস্থা যেন সুন্দর করা যায় তাহলে এই খাত খুবই ভালো করবে এবং এই ব্যবসায় বিপুল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।