কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুনে পুড়েছে বাজারের প্রায় ২১ দোকান। গতকাল ভোর রাতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, বাজারের ব্যবসায়ীরা যখন দিন শেষে যে যার বাড়িতে ঘুমে আচ্ছন্ন তখন মধ্যরাতের আগুনে সব নিঃশেষ হয়ে গেছে। আগুন লাগার পরপরই মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মুদি দোকান, একাধিক শো-রুম, চায়ের দোকান, ফার্মেসী, ইলেকট্রি অ্যান্ড হার্ডওয়্যার, গাছের গুদাম, একটি কীর্টনাশের দোকান ও একাধিক ফার্নিচারের দোকানসহ অন্তত ২১টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
খবর পেয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও ততক্ষণে সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মার্কেটটিতে প্রায় অর্ধশত দোকান আছে। এসব দোকানে কাজ করে তিন শতাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোতে কোটি কোটি টাকার মালামাল ছিল। মার্কেটের পেছনের অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে পুরো মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এখন এ মার্কেটের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে ২১টি দোকান।
ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, খরুলিয়া গরু বাজারের পূর্ব অংশের আমিন মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। শুরুতে স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও পুড়ে যাওয়া দোকানগুলো ফার্নিচার, গাছের গুদাম ও টিনের বেড়া হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা না গেলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন খরুলিয়া বাজার কমিটির কোষাধ্যক্ষ নুরুল আজিম। তিনি ব্যবসায়ীদের ঘুড়ে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি সহায়তা দাবি করেন।
এদিকে রমজানের আগে শুধু নিঃস্ব নয়, আগামীর দিনগুলো নিয়েও অন্ধকার দেখছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। ভয়াবহ আগুনে শুধু মার্কেটই ছাই হয়ে যায়নি, সেই সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়েছে তাদের ভবিষ্যতও। ছাই হয়ে যাওয়া মার্কেটের দিকে হতাশ হয়ে তাকাচ্ছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন বহু মানুষ। পরিবারের ভরণপোষণ নিয়ে তাদের মাথায় হাত। সামনের রমজানে ব্যবসা তো দূরের কথা, কি করে সংসার ও জীবন চালাবেন, সেই চিন্তায় মাথা ঘুরছে অনেক ব্যবসায়ীর।
ইলেকট্রিক অ্যান্ড হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী আজিজ উল্লাহ জানান, মাত্র দু’বছর আগে ইলেকট্রিক ব্যবসার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকান ভাড়া নেন। রমজানের আগে দোকানে তুলেন প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল। কিন্তু আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
ফার্নিচার ব্যবসায়ী নিরঞ্জন শর্মা জানান, তার দোকানেও প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। আগুনের খবর তিনি ছুটে গিয়ে দেখি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
অনেকেই জানিয়েছেন, আগুন তাদের সব আশা কেড়ে নিয়েছে। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকান থেকে কোন মালামাল বের করতে পারেননি তারা। আবার অনেকে কিছু মালামাল বের করতে পারলেও সেগুলো পানি লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। আর আগুনে ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।
গতকাল দুপুরে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সম্রাট খীসা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি ২১টি দোকানের মধ্যে ১৭টি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।