মৌলিক আইনগুলো বাংলায় অনুবাদ করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিতে আইন মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে আগামী ছয় মাসের মধ্যে। এ সংক্রান্ত রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। এর আগে, ২০২২ সালের ১৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। রুলে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা অর্থবহভাবে বাস্তবায়নে দেশের প্রচলিত মৌলিক আইন বাংলায় অনুবাদ করে নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
রিটের আগে এই ১০ আইনজীবী নোটিশ দিয়েছিলেন। নোটিশে বলা হয়, আদালতের যাবতীয় কার্যাবলি আইনের আলোকে পরিচালিত হয়। আদালতের কার্যক্রম সংক্রান্ত মৌলিক আইনগুলো হলো- ‘দণ্ডবিধি, ১৮৬০’; ‘সাক্ষ্য আইন, ১৯৭২’; ‘চুক্তি আইন, ১৮৭২’; ‘সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭’; ‘সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট, ১৮৮৭’; ‘সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২’; ‘ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮’; ‘দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮’ এবং ‘তামাদি আইন, ১৯০৮’; ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ) রুলস, ১৯৮৮’; ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (হাইকোর্ট বিভাগ) রুলস, ১৯৭৩’; ‘ক্রিমিনাল রুলস এ- অর্ডারস, ২০০৯’; ‘সিভিল রুলস এ- অর্ডারস’। অধিকাংশ আইন ব্রিটিশ আমলে এবং ইংরেজি ভাষায় প্রণীত।
নোটিশে আরো বলা হয়, আদালতে ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব আইনের গুরুত্ব ও ব্যবহার সর্বাধিক। এ আইনগুলোর বাংলায় অনুবাদ করে নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশ ছাড়া আদালতের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের আইনি বিধান সম্পূর্ণ অর্থহীন এবং অযৌক্তিক। এখন পর্যন্ত এসব মৌলিক আইনের কোনো নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ প্রণয়ন করা হয়নি। সর্বস্তরে বিশেষত আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের স্বার্থে ওই মৌলিক আইনগুলোর বাংলায় অনুদিত নির্ভরযোগ্য পাঠপ্রকাশ অত্যাবশ্যক। মৌলিক আইনগুলোর বাংলায় অনুবাদ করে নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রকাশে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে নোটিশে অনুরোধ জানানো হয়।
১০ আইনজীবী হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান, মীর ওসমান বিন নাসিম, মো. আসাদ উদ্দিন, মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. জোবায়েদুর রহমান, মো. আব্দুস সবুর দেওয়ান, আল রেজা মো. আমির, আব্দুল্লাহ হিল মারুফ ফাহিম, জিএম মুজাহিদুর রহমান ও মো. জহিরুল ইসলাম।