২০২৩ সালের গোটা বছর পাকিস্তানে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪ হাজার ২১৩ জন শিশু; অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১১ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে গত বছর। এই শিশুদের মধ্যে মেয়ে এবং ছেলে- উভয়ই রয়েছে।
গতকাল ‘ক্রুয়েল নাম্বার্স ২০২৩’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা ন্যাশনাল কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস (এনসিএইচআর)। প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গত বছর দেশটির চার প্রদেশ পাঞ্জাব, সিন্ধ, খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান এবং তিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ইসলামাবাদ, আজাদ কাশ্মির এবং গিলগিট বাল্টিস্তান- সবখানে ঘটেছে শিশু নির্যাতন। তবে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে পাঞ্জাব প্রদেশে। এনসিএইচআরের তথ্য অনুযায়ী, শতাংশ হিসেবে ৪ হাজার ২১৩ টি শিশু নির্যাতনের ঘটনার ৭৫ শতাংশই ঘটেছে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবে। এছাড় সিন্ধে ১৩ শতাংশ সিন্ধের, ইসলামাবাদে ৭ শতাংশ, খাইবার পাখতুনখোয়ায় ৩ শতাংশ এবং বেলুচিস্তানে ২ শতাংশ, আজাদ কাশ্মিরে ২ শতাংশ এবং গিলগিট বাল্টিস্তানে ২ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার মেয়ে ও ছেলে শিশুদের আনুপাতিক হারও বেশ কাছাকাছি। এনসিএইচআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতিত ৪ হাজার ২১৩ জন শিশুর মধ্যে মেয়ে শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ২৫১ জন (৫৩ শতাংশ) এবং ছেলে শিশুর সংখ্যা ১ হাজার ৯৬২ জন (৪৭ শতাংশ)। নির্যাতিতদের মধ্যে বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি ৫ বছর বা তারচেয়েও কম বয়সি শিশুও রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতকের ভূমিকায় এসেছে আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্য, অপরিচিতরা। প্রতিবেদনটি প্রস্তুতে মাঠ পর্যায় থেকে শিশু নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা সংগ্রহ ও যাচাই করে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনকে সহযোগিতা করেছে দেশটির এনজিও সংস্থা সাহিল। যে ৪ হাজারের বেশি শিশু নির্যাতনের ঘটনা গত বছর ঘটেছে, সেগুলোর ৯১ শতাংশ পুলিশের নথিতে মামলা আকারে লিপিবদ্ধ রয়েছে। বাকি ৮ শতাংশ ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত যেতে পারেনি। এছাড়া গত বছর অপহৃত হয়েছে ১ হাজার ৮৩৩ জন শিশু এবং নিখোঁজ হয়েছে ৩৩০ জন এবং বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ২৯ জন শিশু। এদের মধ্যে ২৭ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছিল এনসিএইচআর। সেখানে সংস্থার চেয়ারপার্সন রাবিয়া জাভেরি আগা বলেন, ‘(শিশু নির্যাতনের) এই সংখ্যা অবশ্যই নিষ্ঠুর, কিন্তু এটি সত্য এবং আমাদের অবশ্যই এই সমস্যাটিকে মোকাবিলা করতে হবে। পাকিস্তানে শিশু নির্যাতন যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তার প্রমাণ এই সংখ্যা। এটা খুবই দুঃখজনক যে পাকিস্তানের সরকার এখনও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে কোনো অ্যাকশনপ্ল্যান গ্রহণ করেনি, কিন্তু আমাদের উচিত হবে- ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সরকার এবং জনগণ- উভয়কেই এ ইস্যুতে সচেতন করা।’