পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শেহবাজ শরিফ। গতকাল দেশটির জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে এই পদে নির্বাচিত হন তিনি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন প্রভাবশালী শরিফ পরিবারের এই সদস্য।গতকাল পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
ডন বলছে, পিএমএল-এন সভাপতি শেহবাজ শরিফ ২০১ ভোট পেয়ে পাকিস্তানের ২৪তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন বলে জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে পিটিআইয়ের প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী ওমর আইয়ুব খান পেয়েছেন ৯২ ভোট।
এরপর আয়াজ সাদিক শেহবাজকে সংসদ নেতার আসনে ডেকে নেন। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই সংসদে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ঘোষণার পর বড় ভাই নওয়াজকে জড়িয়ে ধরেন শেহবাজ। এর আগে কয়েক দিনের টানা আলোচনার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পাকিস্তানে সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছায় নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
পরে দলীয়ভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য শেহবাজ শরিফকে মনোনয়ন দেয় পিএমএল-এন। পিএমএল-এন ছাড়াও শেহবাজের পেছনে পিপিপি, এমকিউএমণ্ডপি, পিএমএল-কিউ, বিএপি, পিএমএল-জেড, আইপিপি এবং এনপির মোট ২০৫ সদস্যের সমর্থন ছিল বলে জানানো হয়েছিল।
এছাড়া পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে শেহবাজ শরিফের বিপরীতে ছিলেন পিটিআই-মনোনীত ওমর আইয়ুব খান। তিনি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে শেহবাজ শরিফের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে আপত্তি জানালেও পরে তা খারিজ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে লাহোরে জন্ম নেওয়া শেহবাজ শরিফ পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা এবং তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। তিনি পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
রাজনীতি শুরুর পর উত্থান-পতনের ৩৪ বছরে এসে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে মিয়া মোহাম্মদ শেহবাজ শরিফ ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেবারই প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি।
এছাড়া পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মুশাররফ শরিফ ভাইদের সৌদি আরবে নির্বাসিত করার আগে ১৯৯৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শেহবাজ শরিফ। পরে আরো দুই দফায় ২০০৮-২০১৩ এবং ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্তও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শেহবাজ ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে জাতীয় পরিষদের আসনে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবং এমএনএ নির্বাচিত হন। তবে ১৯৯৩ সালে তিনি আবারও প্রাদেশিক পরিষদের আসনে নির্বাচন করেন এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়া হলে তার মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর শেহবাজ পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশটির শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৯৯৯ সালে পারভেজ মুশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে পাঞ্জাব প্রদেশে পিএমএল-এন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পায়। প্রায় একদশকের নির্বাসন থেকে ফিরে সেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেহবাজ দ্বিতীয়বারের মতো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০০৮ সালে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের তিনটি আসন (পিপি-১৫৯, পিপি-১৬১ এবং পিপি-২৪৭) এবং জাতীয় পরিষদের একটি আসনে (এনএ-১২৯) জয় পান শেহবাজ শরিফ। তবে সব আসন ছেড়ে দিয়ে ১৫৯ নম্বর আসন ধরে রাখেন তিনি। শেহবাজের ৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হয় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পাঞ্জাবে মেট্রো বাস প্রকল্প বাস্তবায়ন। ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে শপথ নিলেন পাকিস্তানের সংসদ সদস্যরা পাকিস্তানের মিয়া পরিবারের মিয়া মোহাম্মদ শরিফের দ্বিতীয় ছেলে শেহবাজ শরিফ। দেশটির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং ইত্তেফাক গ্রুপ অব কোম্পানির যৌথ মালিক ছিলেন তিনি। তিনি ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কাজপাগল হিসেবে পরিচিত শেহবাজ শরিফ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তে নিজেকে খাদিমণ্ডই-আলা (প্রধান কর্মচারী) বলতেই বেশি পছন্দ করতেন।