কুসিক মেয়র পদে উপনির্বাচন

ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নজরুল ইসলাম দুলাল, কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। প্রার্থীরা জয় পেতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে, দিন-রাত দৌড়ঝাঁপ করছেন। নির্ঘুম ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ঘর্মাক্ত দেহের কৃষক, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষজন ছাড়াও নানা পেশার ভোটারের সাথেও প্রার্থীরা চিরচেনা আত্মীয়ের মতো সহাস্যে কোলাকোলি ও করমর্দন করছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থী ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের কাছে ভোটারের কদর অনেক বেড়ে গেছে।

এদিকে এ নির্বাচনে ত্রিমুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথা বলছেন নগরীর বাসিন্দারা। তাদের ভাষ্য, এ উপনির্বাচনে প্রভাবশালী তিন প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই হতে পারে। প্রভাবশালী এ তিন প্রার্থী হলেন- সাবেক দুইবারের মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক নেতা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, নগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। নিজাম কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা। বিএনপি নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ না করলেও এ নির্বাচনে কায়সারের পক্ষে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীকে গণসংযোগ, উঠান বৈঠকে ও প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে। এসব নেতাকর্মীরা আটঘাট বেঁধে প্রার্থীর জয়ের লক্ষ্যে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন। অপর প্রার্থী সাক্কুর পক্ষেও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা কাজ করছেন এবং তারা এবার সাক্কুর জয় নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপর প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা। এমপি কন্যা সূচনার বিজয়ের লক্ষ্যে জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে ভোটের মাঠ চয়ে বেড়াচ্ছেন। ভোটের মাঠে চার প্রার্থীর মধ্যে এ তিন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা ও ভোটের সমীকরণে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এখানে হাতি প্রতীকের প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম প্রচারণা চালালেও তার পক্ষে দলের নেতাদের মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনি এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাইকিং ও প্রচার-প্রচারণার ডামাডোল। নগরীর শপিং মল, দোকানপাট ও অলিগলি সড়কে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। বলা যায়, পোস্টারে-ব্যানারে ছেয়ে আছে পুরো নগরী। নগর এলাকা ঘুরে সর্বত্র নির্বাচনের এমন-ই উৎসবমুখর চিত্র দেখা গেছে। তবে প্রার্থীদের গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠকে একে অপরকে টার্গেট করে দেয়া বক্তব্যে ভোটের মাঠে কিছুটা উত্তাপও ছড়াচ্ছে। এদিকে প্রার্থীদের নিয়ে নগরীর পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রার্থীরা কোমর বেঁধে নির্বাচনি মাঠে দিন-রাত সময় দিচ্ছেন। ভোটারের সমর্থন আদায়ে দোকানপাট ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। তবে এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন এমন ব্যক্তিকেই ভোট দিতে চান ভোটাররা। নগরীর দক্ষিণ চর্থা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবু তাহের, উত্তর আশ্রাফপুরের নূরে আলম, জাঙ্গালিয়ার জয়নাল হোসেনসহ অনেকে জানান, তারা ক্লিন ইমেজের সৎ ও যোগ্য প্রার্থী দেখে-শুনে-বুঝে ভোট দেবেন এবং যিনি সুখে-দুঃখে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন, তাকেই ভোট দেবেন। তবে ভোট সুষ্ঠু হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক ভোটার। নগরীর কাঁটাবিল এলাকার হেলাল উদ্দিন, আবু তাহের ও পাথুরিয়াপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন আহমেদসহ অন্তত ১২ জন ভোটার বলেন, ভোটের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। এমন পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকলে তারা কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রশাসন যদি লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে তাহলে ভোটাররা শঙ্কামুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।

প্রার্থীদের গণসংযোগ-উঠান বৈঠক : গতকাল সোমবার দিনভর নগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। তিনি ভোটারদের কাছে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন এবং নগরীর সকল ওয়ার্ডের উন্নয়ন সমতা বজায় রেখে নানান প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ সিটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখানে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি। তিনি নির্বাচত হলে নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। তিনি বলেন, দুই মেয়াদে তিনি এ সিটির মেয়র ছিলেন। সরকারের সহায়তায় নগরীর উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। দীর্ঘ বছর নগরবাসীর সেবা দিয়েছি, এখন তাদের দুয়ারে দুয়ারে ভোটের জন্য যাচ্ছি, সাড়া পাচ্ছি। আশা করি তৃণমূলের মানুষ আমাকে নির্বাচিত করে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ দিবেন। ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন।

তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, নগরবাসী আমাকে চেনেন-জানেন। আমি তাদের দোয়া ও ভোট চেয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। তারা আমাকে কথা দিচ্ছেন। আমিও তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তোলার। হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে প্রতিটি ওয়ার্ডে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমতা রাখবেন এবং তিলোত্তমা নগরী গড়ে তুলবেন।