শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা, চোখের অস্বাভাবিকতা এবং জন্ডিসের জন্য নবজাতকদের সর্বজনীন স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ‘বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ চালু করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। এসব কারণে সৃষ্ট অক্ষমতা প্রতিরোধে সহায়তার উদ্দেশ্যে গতকাল এই নির্দেশিকা চালু করা হয়। এ বিষয়ে এক আঞ্চলিক ওয়েবিনারে শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবন্ধিতা ও অকাল মৃত্যু রোধে নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ।
গতকাল ভারতের নয়াদিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সায়মা ওয়াজেদ বলেন, ‘আঞ্চলিক বাস্তবায়ন নির্দেশিকা নবজাতক বা নবজাতকের স্ক্রিনিংয়ের জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, যার লক্ষ্য জন্মের পরপরই গুরুতর চিকিৎসাযোগ্য অবস্থার প্রাক-লক্ষ্যণীয় শনাক্তকরণ।’ তার মতে, ‘রেফারেল, রোগ নির্ণয়, ব্যবস্থাপনা এবং যথাযথ চিকিৎসার জন্য ফলোআপের মাধ্যমে এই স্ক্রিনিংগুলো দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা বা অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে সক্ষম হবে।’
আঞ্চলিক পরিচালক বলেন, ‘জন্মের সময় এবং জীবনের প্রথম সপ্তাহে যত্নের উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে প্রতিটি শিশু বেঁচে থাকে এবং তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর জন্য সাফল্য লাভ করে তা নিশ্চিত করার জন্য।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং তিমুর লেস্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সদস্য; যা জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহত্তম। এই অঞ্চলের সদস্য দেশগুলোর প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একটি পরামর্শমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দেশিকাটি তৈরি করা হয়েছে।
ডব্লিউএইচও বলছে, নির্দেশিকায় নন-ইনভেসিভ টুলসহ সহজ পরীক্ষাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত করা যাবে। এই স্ক্রিনিংগুলো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জন্ম নেওয়ার পরে ছাড় পেলে কিংবা বাড়িতে জন্ম নেওয়ার পরপরই বহির্বিভাগে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা যাবে। বছরের পর বছর ধরে অব্যাহত সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ফলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলে ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর হার ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমস্ত অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং বিশ্বব্যাপী ২৬ শতাংশ। তবে গত দুই দশকে (২০০০ থেকে ২০২১) এই অঞ্চলে ৫ বছরের কম বয়সি মৃত্যুহারের ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটির কারণে ৪ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ দেশগুলো মৃত্যুর অন্যান্য বড় কারণগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করছে।
এই অঞ্চল মাতৃ, নবজাতক ও শিশু মৃত্যুর জন্য ‘২০৩০ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে সায়মা ওয়াজেদ বলেন, ‘আমি আমাদের সকল সদস্য রাষ্ট্র এবং স্টেকহোল্ডারদের শিশুদের যথাযথ ব্যবস্থাপনাসহ হাসপাতালে ছাড়া পাওয়ার আগে এই তিনটি স্ক্রিনিং টেস্ট চালু ও পরিচালনার জন্য বাস্তবায়ন নির্দেশিকা গ্রহণ, আত্মস্থ ও ব্যবহারের আহ্বান জানাচ্ছি।
আঞ্চলিক পরিচালক বলেন, ‘এই স্ক্রিনিং অনুশীলনগুলোকে মানসম্মত করতে, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, প্রতিটি নবজাতকের চাহিদা মেটাতে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ঋণী।’