নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুর-সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের আওতাধীন ৩ নম্বর কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। কূপের তিনটি জোনে গ্যাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বাপেক্স। গত বছরের নভেম্বরে শুরু হওয়া খননকাজ শেষে এখন কূপটিতে চলছে ডিএসটি টেস্ট। এটি শেষ হলে জানা যাবে এখানে কী পরিমাণ গ্যাস মজুত আছে এখানে।
গত শনিবার দুপুরে কূপটির সর্বনিম্ন স্তরে ডিএসটি টেস্ট (ড্রিল স্টেম টেস্ট) শুরু করেন বাপেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গ্যাস পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। তারা নিজেদের এলাকায় গ্যাসের সংযোগের দাবি জানিয়েছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের শাহাজাদপুর-সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রটির ১ নম্বর কূপ উৎপাদনের যাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর একই গ্যাসক্ষেত্রের ২ নম্বর কূপেরও খনন করা হয় এবং গ্যাসের উত্তোলন করা হয়। গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে এই গ্যাসক্ষেত্রের ৩ নম্বর কূপের খননকাজ শুরু করে বাপেক্স। বর্তমানে গ্যাসক্ষেত্রটির আওতাধীন পার্শ্ববর্তী চরকাঁকড়া এলাকায় তৃতীয় কূপ খননে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেল। আরো জানা গেছে, গত শুক্রবার বাপেক্সের খনন কার্যক্রম শেষে গতকাল থেকে পরীক্ষামূলক ডিএসটি টেস্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন চলছে লোয়ার জোনের টেস্ট। কূপটির মোট ৩ হাজার ৩৮৫ মিটার গভীরে খনন করা হয়েছে, যার মধ্যে লোয়ার জোনের ৩ হাজার ৪১ মিটার থেকে ৩ হাজার ৪৬ মিটার এবং ৩ হাজার ৫৭ মিটার থেকে ৩ হাজার ৬৪ মিটার পর্যন্ত টেস্ট কার্যক্রম চলছে। এরপরই অপর দুটি জোনের টেস্ট কার্যক্রম চলবে। ডিএসটি টেস্টের পরেই এখানে মোট মজুতের পরিমাণ জানা যাবে। এই কূপ থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে লোয়ার জোনে গ্যাসের চাপ দেখে মনে হচ্ছে, এই কূপ থেকে আরও বেশি পরিমাণ গ্যাসও পাওয়া যেতে পারে। গতকাল রোববার সকালে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) প্রকল্প পরিচালক প্রিন্স মো. আল হেলাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আমাদের খনন কার্যক্রম শেষে শনিবার থেকে পরীক্ষামূলক ডিএসটি টেস্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন চলছে লোয়ার জোনের টেস্ট। কূপটির মোট তিন হাজার ৩৮৫ মিটার গভীরে খনন করা হয়েছে, যার মধ্যে লোয়ার জোনের ৩০৪১ মিটার থেকে ৩০৪৬ মিটার এবং ৩০৫৭ মিটার থেকে ৩০৬৪ মিটার পর্যন্ত টেস্ট কার্যক্রম চলছে। এর পরই অপর দুটি জোনের টেস্ট কার্যক্রম চলবে। ডিএসটি টেস্টের পরই এখানে মোট গ্যাস মজুতের পরিমাণ জানা যাবে। বাপেক্সের চরকাঁকড়া ৩ নম্বর কূপের ড্রিলিং ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের টার্গেট ছিল এখান থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে পারব। তবে লোয়ার জোনে গ্যাসের কন্ডিশন দেখে মনে হচ্ছে আমরা আরো ভালো কিছু আশা করতে পারি। বাকি দুটি জোনের টেস্ট শেষে মোট গ্যাসের মজুত সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারব। সেভাবেই কাজ করছি আমরা। প্রয়োজনীয় পাইপলাইন বসানোর পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই কূপ থেকে গ্যাস জাতীয় গ্রিড লাইনে সরবরাহ করা হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আমরা কোম্পানীগঞ্জবাসী অনেক আনন্দিত। ওবায়দুল কাদের সাহেব এই গ্যাসক্ষেত্র নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন। জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে দেশের সমৃদ্ধিতে এই কূপটি ভূমিকা রাখবে। আমাদের আনন্দের শেষ নেই। তবে এলাকাবাসীর দাবি, যেন এলাকায় সংযোগ স্থাপন করা হয়। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের শাহাজাদপুর-সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রটির ১ নম্বর কূপ উৎপাদনের যাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। বর্তমানে দেশে গ্যাসের যে তীব্র সংকট চলছে, এই সংকটময় মুহূর্তে এই কূপে গ্যাস প্রাপ্তি আশার আলোর জন্ম দিয়েছে।