ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইউজিসির বাজেট বরাদ্দ

বৈষম্যের অভিযোগ তুলে অসন্তোষ জবি শিক্ষকদের

বৈষম্যের অভিযোগ তুলে অসন্তোষ জবি শিক্ষকদের

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ত্বত্তাবধায়ক ও অবিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সার্বিক তদারকির পাশাপাশি বার্ষিক বরাদ্দ ও বিশেষ প্রদোননা দিয়ে থাকে। এ বছরেরও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বিষয়ের অনুপাত ও প্রয়োজন অনুসারে বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে ইউজিসি। কিন্তু এবার প্রতিষ্ঠানটির ওপর বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী বেশি হওয়া সত্ত্বেও কম বরাদ্দ পাচ্ছে। ইউজিসির প্রকাশিত সর্বশেষ ৪৯ তম প্রতিবেদনে দেখা যায়, সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্রমানুসারে ঢাবি, চবি, রাবি, জবি, জাবি, শাবিপ্রবি এবং খুবি। অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা অনুয়ায়ী জবির স্থান চতুর্থ। এছাড়া শিক্ষকদের সংখ্যা ৬৭১ অনুসারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ষষ্ঠ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে অধিকসংখ্যক শিক্ষক আছে ঢাবি, চবি, রাবি, জাবি ও বুয়েটে এবং জবির থেকে কমসংখ্যক শিক্ষক আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু মোট বাজেট ও খাতভিত্তিতে বরাদ্দ হিসাব করলে দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই পেছনের সারিতে অবস্থান করছে জবি। বাজেট বরাদ্দ অনুসারে জবির অবস্থান দশম, যা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তুলয়ায় খুবই কম। ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যূনতম সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জবির শিক্ষক শিক্ষার্থী অনেক বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় বরাদ্দ নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম। ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে সব অঙ্গন। ইউজিসির সর্বশেষ ৪৯তম বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বরাদ্দ বিবরণীতে দেখা যায়, মোট বাজেটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হয়েছে ২৬৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। জগন্নাথকে ১৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। অথচ জগন্নাথের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ হাজার ৫২৭ জন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫ হাজার ৬১০ জন। একইভাবে জবির তুলনায় কম শিক্ষার্থী রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র ৮ হাজার ১১৫ জন শিক্ষার্থী ও ৫৬৬ জন শিক্ষকে বাজেট বরাদ্দে এগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই তুলনায় জবির ৯ হাজার শিক্ষার্থী এবং ১০০ জন শিক্ষক বেশি থাকা সত্ত্বেও জগন্নাথকে মোট বাজেটে ১৩ কোটি টাকা কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এমনকি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৬ হাজার ৬৭৪ শিক্ষার্থী ও ৫২৩ শিক্ষকের জন্য মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১২ কোটি টাকা। এদিকে মোট বাজেটের অন্তর্ভুক্ত পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তা খাতেও বরাদ্দ কম। জবিতে এই চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও পূর্ণ আবাসিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে এই খাতে ৫৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা আর জবিকে দেয়া হয়েছে ২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা; যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গবেষণা খাতে শিক্ষক অনুপাতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে জগন্নাথের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট প্রায় অর্ধেকেরও কম। শাবিপ্রবি পেয়েছে ৬ কোটি টাকা আর জবি পেয়েছে মাত্র ২ কোটি ৫০ লাখ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উপকরণ ও যন্ত্রপাতি খাতে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ কোটি ৬ লাখ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৪ কোটি ৪৩ লাখ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ৩৭ লাখ, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ১৫ লাখ, পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩ কোটি ৫ লাখ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২কোটি ৬৭লাখ টাকা। অথচ উক্ত খাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট মাত্র দেয়া হয়েছে মাত্র ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

ইউজিসির অর্থ বরাদ্দে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এত কম থাকায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সাথে বৈষম্য হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। নীল দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, অর্থাভাবে শিক্ষা ও গবেষণায় আমরা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছি। মানবসম্পদ ও টেকসই উন্নয়ন বৃদ্ধিসহ শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট না থাকার কারনে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সংকুলান হচ্ছে না। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের জন্য স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন। নীল দলের অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক ও ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোমিন বলেন, দেশের বড় এবং সনামধন্যদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। কিন্তু নানাবিধ সংকটের কারণে আমরা পিছিয়ে আছি। গবেষণা ও অন্যান্য বিষয়ে কার্যক্রম বাড়াতে বাজেট প্রয়োজন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, আমরা বরাবরই বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত ও অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বাজেট একেবারেই কম। প্রতি বছর বাজেট কিছুটা বাড়ে কিন্তু সেটা সবার ক্ষেত্রেই। অতীতের শতকরা হিসাবে আমরা আশা রাখব, আগামী বাজেটে জবির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নিবে। অর্থ পরিচালক অধ্যাপক ড. মহসিন রেজা বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্যতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত জরুরি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর তুলনায় আমরা অনেক বেশি। অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস নির্ভর কার্যক্রম। জ্বালানি খরচও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অনুযায়ী ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, বরাদ্দের সিংহভাগই শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থ সংকট। উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। পরিধি ও মান বেড়েছে। আবাসন সুবিধা নেই, হলগুলো বেদখল। এই অবস্থায় বাজেটের সংকট দূর করতে হবে। সার্বিকভাবে শিক্ষার মান বাড়াতে বাজেট বাড়াতে হবে।

ইউজিসির অর্থ পরিচালক রেজাউল করিম হাওলাদার বলেন, শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হিসাব করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিট বাজেট ও খরচের উপযোগিতা, তাদের পাঠানো তথ্যের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। ইউজিসি সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কম বরাদ্দ দেয়া হয় বিষয়টা এমন না। জবিতে হল না থাকার কারনে বাজেটের পরিমাণ কমে যায়। তারা যে তথ্য পাঠায় সেই তথ্যের ওপর নির্ভর করেও দেয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত