ঢাকা ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্যরকম

খামারের একমাত্র পাহারাদার কুকুর

খামারের একমাত্র পাহারাদার কুকুর

খোলা মাঠে চরে বেড়াচ্ছে একদল ভেড়া, আর একটু দূরেই বসে সেগুলোর ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখছে একটি কুকুর। প্রাণিগুলো নির্দিষ্ট গন্ডি ছেড়ে বেরোলেই দৌড়ে গিয়ে তাদের শাসিয়ে আবার ঠিক জায়গায় ফিরছে কুকুরটি। শুধু তাই নয়, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি কিংবা বিপদের আঁচ করতে পারলে জানান দিচ্ছে মালিককে। এমন দৃশ্য বিদেশে দেখা গেলেও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সত্যিই বিরল। তবে ভেড়া আর ছাগল পালনে এমন এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছেন শরীয়তপুরের সুমন খান নামের এক ওষুধ ব্যবসায়ী। তার খামারের প্রাণিদের নিরাপত্তা দিচ্ছে একটি জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার যোগপাট্টা এলাকার হামিদ খানের ছেলে সুমন খান। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার সুবাদে অধিকাংশ সময় ঢাকাতেই থাকেন তিনি। তবে অনেকটা শখের বসেই গ্রামের বাড়িতে একটি ভেড়ার খামার তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। দুই বছর আগে ২০টি ভেড়া আর অল্প কিছু ছাগল নিয়ে শুরু করেন তার খামার। সেখান থেকে বাচ্চা উৎপাদনের মাধ্যমে বর্তমানে খামারটিতে ৬০টি ভেড়া ও ২০টি ছাগল রয়েছে। খামার তৈরির শুরুতে চোর ও শেয়াল থেকে ভেড়াগুলোকে রক্ষা করতে সুমন খান নিয়ে আসেন একটি জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুর। পরবর্তীতে সেটিকে ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ বানিয়ে তোলেন। তার খামার দেখাশোনায় তিনজন লোকের পাশাপাশি কুকুরটি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। রাতের বেলা কর্মীরা যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন পুরো খামারটি দেখভালের গুরুদায়িত্ব নেয় জার্মান শেফার্ডটি। কুকুরটির দেখাশোনা করা নুরুল হক বলেন, কুকুরটির কারণে আমরা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি।

কোনো চোর ডাকাত এলে ও একাই সব সামলে নিয়ে আমাদের জানান দেয়। আর সকালে যখন ভেড়াগুলো বের করি কুকুরটি ওদের সঙ্গে থাকে, এজন্য ভেড়াগুলোও অন্য কোথাও যেতে পারে না। কুকুরটি থাকায় এই পশুগুলো দেখাশোনা করতে আমাদের কম লোকেই হয়ে যায়। কুকুর দিয়ে ভেড়া পালনের এমন দৃশ্য দেখে যাত্রাপথে দাঁড়িয়েছেন তোহা নামের এক যুবক। তিনি বলেন, আমি এই পথ দিয়ে যাওয়ার পথে দেখলাম, মাঠে কিছু ছাগল ভেড়া চরানো হচ্ছে, যার দেখাশোনা করছে জার্মান শেফার্ড ব্রিডের একটি বিদেশি কুকুর। আসলে এমন দৃশ্য সচরাচর উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়। আমাদের দেশে এমন দৃশ্য দেখে বিষয়টি খুব ভালো লাগল। ভেড়া পালনের এমন পন্থা অবলম্বনের বিষয়টি জানতে চাইলে মালিক পক্ষের সেলিমুজ্জামান বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটা সৌখিন ভেড়ার খামার করতে। যেখান সৌখিনতার পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর এই খামারটি তৈরি করার প্রথমে প্রাণিগুলোর নিরাপত্তার কথা ভেবে এই জার্মান শেফার্ডটি নিয়ে আসা হয়।

পরে ওকে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। প্রথম থেকেই কুকুরটিকে ছাগল ও ভেড়ার সঙ্গে রাখায় ওদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যার ফলে কুকুরটি ওদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। প্রাণিগুলোকে নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে আটকে রাখছে। কুকুরটি তার খামারে শতভাগ নিরাপত্তা দিচ্ছে এমন জানিয়ে তিনি বলেন, কুকুরটি যখন রাতে পাহারা দেয় সেই বলয়ের মধ্যে বাইরের কোনো অপরিচিত ব্যক্তি বা কোনো প্রাণি ঢুকে পড়লে তখন ও খুব জোরে চিকৎকার করে এবং তেড়ে যায়। ফলে আমাদের কর্মীরা এ বিষয়ে আন্দাজ করতে পারে। নিরাপত্তার ব্যাপারে যেখানে আমাদের তিন থেকে চারজন কর্মীর প্রয়োজন, সেখানে এই কুকুরটি একাই সেসব সামলে নিচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত