ইফতার ঘিরে চকবাজারে উৎসবের আমেজ

প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রোজার ইফতারকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে। বরাবরের মতোই নানান বাহারি সব খাবার, শরবত আর হাঁক-ডাকে সরগরম ছিল পুরো এলাকা। আর নানান স্বাদের বাহারি এসব ইফতার কিনতে আশপাশ ও দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন সাধারণ মানুষ। ভোজনবিলাসী মানুষের উপস্থিতিতে ইফতারের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তৈরি হয়েছে মানুষের ভিড়। স্থানীয়রা বলেছেন, রোজায় ইফতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উপলক্ষ্য, যা মুসলিম সমাজে প্রতি বছর বড় উৎসবের মতো পালন করা হয়। আর এই আয়োজনে বহুল পরিচিত নাম চকবাজার। বহু বছরের ঐতিহ্য আর খাবারের স্বাদের কারণে পুরান ঢাকার এই খানদানি ইফতার আয়োজনের সুনাম ছড়িয়ে আছে সারা দেশ জুড়েই। চকবাজারে মুখরোচক নানান খাবার নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে নানান প্রকার বাহারি পানীয়র আয়োজনও থাকে।

সরেজমিন দেখা যায়, ছোলা-বুট, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, ঘুঘনি, নিমকি, জিলাপি, শাহী জিলাপি, রেশমি জিলাপি, জালি কাবাব, সুতি কাবাব, টিক্কা কাবাব, মোরগ পোলাও, পরোটা, কাটলেট, ডিম চপ, কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি, গরু-খাসির হালিম, দইবড়া, পনির, কিমা পরোটা, খাসির লেগ রোস্ট, মুরগি-হাঁস-কবুতর-কোয়েলের ফ্রাইসহ নানান আয়োজনে ভরপুর ছিলো পুরো চকবাজার। আর মিষ্টান্ন ও পানীয়ের মধ্যে রয়েছে রসমালাই, দধি, ছানার মিষ্টি, ফালুদা, ফিরনি, লাবাং, লেবুর শরবত, তোকমার শরবত, লাচ্ছি, নুরানি লাচ্ছি, ছানামাঠা, মাঠা ও পেস্তা বাদামের শরবতসহ বিভিন্ন আইটেম।

আব্দুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ১৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে পুরান ঢাকার চকবাজারে শাহি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান। পরে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭০২ সালে চকবাজারকে একটি আধুনিক বাজারে রূপ দেন। তখন থেকেই প্রতি রমজানে এখানে মুখরোচক ইফতারির ভাসমান বাজারের প্রচলন শুরু হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত চলছে। অনেকে বংশপরম্পরা এখানে ব্যবসা করছেন। এটা অনেক দিনের ঐতিহ্য। চকবাজারে ইফতার কিনতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি ছাত্র জীবনে পুরান ঢাকায় থাকতাম। তখন থেকেই এখানকার ইফতার আয়োজন আমার কাছে খুব ভালো লাগত। এরপর থেকে এখনো প্রতি রোজায় এখানে আসি। অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায়। দেখতেও অনেক ভালো লাগে। সবার মধ্যেই একটি উৎসবের আমেজ কাজ করে। তবে গত বছর তুলনায় এবার দাম অনেক বেশি। মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের পক্ষে এখান থেকে খুব বেশি ইফতার কেনার সুযোগ নেই।

অবশ্য বাড়তি দামের বিষয়টি মানতে নারাজ বিক্রেতারা। তারা বলেছেন, বাজারেই সবকিছু দাম বেশি। সেজন্য ইফতার আয়োজনেও এর প্রভাব পড়েছে। নজরুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে প্রতিদিন জিনিসের দামি বেশি, এটা তো সবাই জানেন। আমরা খাসির কাবাব ও গরুর কাবাব কেজি হিসেবে বিক্রি করছি, যা এক থেকে দেড় হাজারের মধ্যে রয়েছে। আর খাসির রানের রোস্ট, মুরগির রোস্ট ও কবুতরের রোস্ট পিস হিসেবে বিক্রি করছি। আকার ও মানভেদে এগুলোর দাম নির্ভর করে। এছাড়া চিকন জিলাপি, বড় শাহি জিলাপি, দইবড়া, চিকেন স্টিক পিস, জালি কাবাব, বিফ স্টিক, কিমা পরোটা ও টানা পরোটা গতবারের দামের কাছাকাছি রয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র চকবাজারেই এসব বাহারি ইফতার আয়োজন সীমাবদ্ধ নেই। চকবাজারের পাশাপাশি পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, সদরঘাট, নবাবপুর, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, গুলিস্তান, ওয়ারী, লক্ষ্মীবাজার, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, আরমানিটোলা, সুরিটোলা, কাপ্তানবাজার, চানখাঁর পুল, আজিমপুর, টিপু সুলতান রোড ও ধোলাইখালসহ বিভিন্ন এলাকায় কিংবা পাড়া-মহল্লায়ও পাওয়া যাচ্ছে বাহারি সব ইফতার সামগ্রী।