ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজার সৈকতে ‘গান গাওয়া’ শিশু

নুরে জান্নাতের হাতে প্রধানমন্ত্রীর ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র

নুরে জান্নাতের হাতে প্রধানমন্ত্রীর ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে পর্যটকদের আনন্দ দিয়ে যে আয় হতো, তাই দিয়ে চলত চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুরে জান্নাতের পরিবার। পরিবার বলতে এক বোন, দুই ভাই, মা-বাবা নিয়ে পাঁচজনের সংসার তাদের। কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ ঘোনার পাড়া এলাকার বসবাসকারি নুরে জান্নাতের বাবার মুহাম্মদ ইসলাম ছিলেন একজন দিন মজুর, আর মা গৃহিণী। কিন্তু হঠাৎ এমন এক অমানিশার গল্পের মধ্যে বন্দি হতে হলো তাকে পুরো পরিবার। দিন মজুরি কাজ করতে গিয়ে ৩ বছর আগের একটি দুর্ঘটনায় বারা পঙ্গু হয়ে যান। চলাফেরা আর কোনো কাজ করারও সুযোগ হয় না তার। ফলে সংসারের হাল ধরতেই সৈকতে গান গেয়ে আয় করে নেমে যায় নুরে জান্নাত। তবে এতেও বন্ধ করেনি লেখাপড়া। কক্সবাজারের ঘোনার পাড়া কাদেরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাত গানে গানে মানুষকে আনন্দ দিলেও আয় দিয়ে পাঁচজনের সংসার এগিয়ে নিতে থাকেন। আর এই গল্পটি গত ২৫ জানুয়ারি প্রচারিত হয় বেসরকারি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন যমুনা টিভি, যার সূত্র ধরেই মঙ্গলবার দুপুরে নুরে জান্নাতের পরিবারের হাতে পৌঁছে গেছে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শহীন ইমরান পরিবারটির হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র হস্তান্তর করেন। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শহীন ইমরান জানান, সংবাদটি প্রচারিত হওয়ার পর তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি বিষয়টি খোঁজখবর নেয়ার নির্দেশ দেন। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নুরে জান্নাতের মা সানজিদা আক্তারের অনুকূলে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র (তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র) করে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করে তাদের হাতে সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে নুরে জান্নাতের পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘরের কাজ শেষ হলে তারা সেখানে বসবাস শুরু করতে পারবে। কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা বলেন, এর আগে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তার পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা ও নুরের পড়ালেখার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। সে যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নুরে জান্নাতকে কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি করা হয়েছে। যেখানে সে নিয়মিত গান শিখতে পারবে। নুরের মা সানজিদা ইসলাম জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কীভাবে কৃতজ্ঞতা জানাব, তার কোনো ভাষা নেই। সবসময় একটা চিন্তা ছিল কীভাবে আমার মেয়েটি ভালো স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি গানের চর্চা চালিয়ে যাবে। আল্লাহ আমার সে দোয়া কবুল করেছেন। বাবা মুহাম্মদ ইসলাম বলেন, টেলিভিশনের একটি সংবাদের মাধ্যমে আমার মেয়ের জীবন পরিবর্তন হতে চলেছে। আমরা জীবনেও কল্পনা করিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এত বড় উপহার পাব। বিশেষ করে আমি দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর থেকে অসহায়ত্ব নিয়ে কেটেছে তিনটি বছর। ভারী কোনো কাজও করতে পারি না। কীভাবে সংসার চালাব, তা ছিল সবসময় চিন্তা। আল্লাহর রহমতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে আমরা অনেক খুশি। তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মহোদয়, ইউএনও ও টেলিভিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। নুরে জান্নাত বলেন, এখন পড়ালেখা ও গানের চর্চা চালিয়ে যেতে পারব। আমি যেনো ভালো শিল্পী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলে দেশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে পারি, এর জন্য সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। যমুনা টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি এহসান আল কুতুবী জানান, সৈকতে গান শুনে মুগ্ধ হওয়ার পর জান্নাত সম্পর্কে জেনে তিনি প্রতিবেদন তৈরি করে পাঠান এবং প্রচারিত হয়। একটি সংবাদেই একটি পরিবারের জীবনে বদলে গেলে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত