ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সোমালিয়ার পথে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ

উপকূলে পৌঁছার পর যোগাযোগ স্থাপন ও নাবিকদের অবস্থা জানা যাবে
সোমালিয়ার পথে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এখনও সোমালিয়া উপকূল বরাবর যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেটি উপকূলে পৌঁছার পর যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং নাবিকদের সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে। জানা যায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। গত মঙ্গলবা দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। গতকাল সকালে নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, ভ্যাসেল ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট থেকে এমভি আবদুল্লাহ’র সর্বশেষ অবস্থান তারা জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে এখনও ২৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে আছে। উপকূলে পৌঁছাতে আরো দেড় দিন অর্থাৎ ৩৬ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মেহেরুল করিম জানান, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব-আমিরাতের দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজে থাকা নাবিকদের কাছ থেকে তারা জলদস্যু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানতে পারেন। এ বিষয়ে কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নাবিকদের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়। তখন তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর জলদস্যুরা নাবিকদের মোবাইল কেড়ে নেয়ায় আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

ছেলেকে সুস্থ ফিরিয়ে দিন- জিম্মি নাবিকের মায়ের আর্তি

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের বাসা চট্টগ্রাম নগরীতে। আকস্মিকভাবে প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির এমন বিপদের মুখে পড়া নিয়ে দিশেহারা পরিবারটির সদস্য ও স্বজনরা। আতিকুল্লাহর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মিনা আজমাইন স্বামীর এমন বিপদের কথা শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ বৃদ্ধা মা আতিকুল্লাহর তিন মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

এদিন রাত ১০টার দিকে নগরীর নন্দনকাননের রথের পুকুর পাড় এলাকায় আতিকুল্লাহ খানের বাসায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। উদ্বেগ-আশঙ্কা নিয়ে স্বজন ও বন্ধুবান্ধবরাও ছুটে আসছেন ওই বাসায়। আতিকুল্লাহ’র মা শাহনূর আক্তার সারাবাংলাকে জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আতিকুল্লাহ তার স্ত্রীকে হোয়াটস অ্যাপে ফোন করে তাদের জলদস্যুর হাতে জিম্মি হওয়ার খবর জানান। এরপর সন্ধ্যার দিকে ফের ফোন করে জানান, জিম্মি সব নাবিকের মোবাইল ফোন জলদস্যুরা কেড়ে নিচ্ছে। শাহনূর আক্তার বলেন, আমার বৌমাকে ফোন করে বলল, জলদস্যুরা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলছে। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা জাহাজে উঠে আমাদের ঘিরে রেখেছে। তবে আমাদের কোনো ক্ষতি করেনি। ২০ মিনিট পর আবার ফোন করে বলল, আমাদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিচ্ছে। এখন আমার মোবাইলও কেড়ে নেবে। আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ হবে না। আমাদের সোমালিয়া নিয়ে যাচ্ছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহনূর আকুতি করে বলেন, আমি আমার ছেলেটাকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। তার তিনটা ছোট ছোট মেয়ে। আমার নাতনিরা পাঁচ মিনিট পর পর এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমার ছেলেকে দ্রুত সুস্থ অবস্থায় আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। আমি দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া চাই। শাহনূর জানান, তিন মাস আগে আতিকুল্লাহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে যোগ দেন। এর ১৫-২০ দিন পর একবার জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিলেন। তখন একবার বাসায় এসেছিলেন। সেই ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা।

আতিকুল্লাহদের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরকল ইউনিয়নে। তার বাবা বেঁচে নেই। দুই ভাইয়ের মধ্যেই তিনিই বড়। আরেকভাই এখনও পড়ালেখায় আছেন। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ইয়াশা ফাতিমা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। মেঝ মেয়ে উমাইজা মাহাবিন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে খাদিজা মাহাবিনের বয়স মাত্র দুই বছর।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত