গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের প্রতিবাদে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হওয়া মার্কিন সেনা অ্যারন বুশনেলের প্রতি সম্মান জানিয়ে তার নামে একটি সড়কের উদ্বোধন করা হয়েছে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এলাকার জেরিকো শহরে। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত রোববার সড়কটি উদ্বোধন করেছেন জেরিকোর মেয়র আবদুল করিম সিদর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে চিনতাম না, তিনিও আমাদের চিনতেন না। আমাদের মধ্যে কোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক বন্ধন গড়ে ওঠেনি; কিন্তু একটি জায়গায় আমরা এক- সেটি হলো স্বাধীনতার প্রতি ভালোবাসা এবং (গাজায়) হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন ২৫ বছর বয়সি অ্যারন বুশনেল। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের প্রতিবাদে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে নিজের শরীরে আগুন দেন তিনি। এই ঘটনার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে অ্যারন বলেন, তিনি কোনোভাবেই গাজায় গণহত্যাকারীদের অংশ হবেন না এবং ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনকে তিনি সমর্থন করেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেওয়ার পর তিন বার চিৎকার করে ‘ফিলিস্তিন স্বাধীন হোক’ স্লোগান দিয়ে নিজ গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন অ্যারন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অ্যারনের। গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনীও। ইসরায়েলি সেনাদের গত পাঁচ মাসের অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩১ হাজার। এই নিহতদের অধিকাংশই নারী-শিশু ও বেসামরিক লোকজন। অন্যদিকে হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন। ইসরায়েলের এই নৃশংস হামলা যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশের সরকারের সমর্থন পাচ্ছে, তখনই বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন গাজার বাসিন্দারা। প্রাচ্য থেকে সুদূর পাশ্চাত্য-ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে রাজপথে নেমেছেন তারা। এই সাধারণ মানুষের কাতারেই যোগ দিয়েছিলেন বুশনেল।
জেরিকো শহরের বাসিন্দারা অ্যারন বুশনেলের আত্মত্যাগকে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকাশ হিসেবে দেখছেন। শহরের অন্যতম কাউন্সিলর আমানি রায়ানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাজায়। ১৯ বছর বয়সে পড়াশোনার জন্য পশ্চিম তীরে এসে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ানকে আমানি রায়ান বলেন, ‘তিনি (অ্যারন) তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ উৎসর্গ করেছেন। গাজার শিশুদের জন্য এই মানুষটি নিজের সব কিছু দিয়ে গেছেন।’ অ্যারনের আত্মহত্যাকে অবশ্য মার্কিন সমালোচকদের একাংশ দেখছেন মানসিক অসুস্থতা হিসেবে। তারা বলছেন, অ্যারনের এই পদক্ষেপ নেওয়া যতখানি রাজনৈতিক প্রতিবাদ, তার চেয়েও বেশি মানসিক সমস্যা-অস্থিরতার লক্ষণ।