ইসরায়লি মন্ত্রিসভার বৈঠক
যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের নতুন প্রস্তাব অবাস্তব
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন একটি প্রস্তাব পেশ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরই মধ্যে মধ্যস্থতাকারী দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রস্তাবটি তুলে ধরেছে তারা। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, হামাসের নতুন এই প্রস্তাবের ফলে পবিত্র রমজানেই যুদ্ধবিরতি হতে পারে। তবে এই প্রস্তাবের দাবিগুলোকে অবাস্তব বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গতকাল এক প্রতিবেদন বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রথম দফায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধ জিম্মিদের ছাড়ার বিনিময়ে ৭০০ থেকে ১০০০ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি চেয়েছে হামাস। এর মধ্যে প্রায় ১০০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। নতুন প্রস্তাবে হামাস আরো বলেছে, ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা যদি গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ও ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্য থেকে ৭০০ থেকে ১০০০ জনকে মুক্তি দেয়, তাহলে ইসরায়েলি জিম্মিদের মধ্য থেকে নারী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের ছেড়ে দেওয়া হবে। হামাসের দাবির মধ্যে আরো রয়েছে- স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, দক্ষিণ গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজা ও গাজার কেন্দ্রে ফিরতে দেওয়া ও ত্রাণ ঢুকতে কোনো বাধা না দেওয়া। হামাসের এই প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, হামাসের যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাবটি সম্পূর্ণ অবাস্তব দাবির ওপর ভিত্তি করে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে গতকাল ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিভায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করার কথা জানিয়েছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়। অন্যদিকে, হামাসের এই প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও মিশরের কর্মকর্তারা। তবে রয়টার্সকে তারা বলেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার সব বিরোধ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তারা। তাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে সর্বশেষ প্যারিসে আয়োজিত আলোচনার ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে হামাসকে ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবে প্রতি ১০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির বিনিময়ে একজন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির কথা বলা হয়েছিল। এবারের চুক্তিতেও একই অনুপাত বজায় রাখা হয়েছে। গত মাসের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল বলেছিল, এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার মানে হলো যুদ্ধে ইসরায়েলের হেরে যাওয়া। হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলের হামলায় এরই মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা। ইসরায়েলের হামলা থেকে বাদ পড়েনি ধর্মীয় স্থাপনাও। ফলে রমজান মাসেও নামাজের স্থান পাচ্ছেন না গাজাবাসী। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে কমপক্ষে ৩১ হাজার ৩৪১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৭৩ হাজার ১৩৪ জন।
এদিকে, গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার জন্য জড়ো হওয়া লোকজনের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও দেড় শতাধিক মানুষ। এই হামলাকে একটি নতুন পূর্বপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ বলে অভিহিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র : আল জাজিরা