ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে মরিচের বাম্পার ফলন

উৎপাদনের সম্ভাবনা ২৯৬০ মেট্রিক টন
খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে মরিচের বাম্পার ফলন

কম খরচ ও পরিশ্রমে কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে খুলণাঞ্চলের কৃষকদের। গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা। সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে মরিচের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য। মরিচ খেতে কৃষকের ছোঁয়া আর সঠিক পরিচর্যায় গাছ হয়ে উঠেছে সুস্থ-সবল। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে গাঢ় সবুজ-লাল কাঁচা মরিচের থোকা। অনেক গাছে ঝুঁপড়ি মরিচ ধরায় গাছ হেলে গেছে। সকালে মরিচ তুলে বিকেলে বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নেন কৃষকেরা। অনেকে মরিচ তুলে নিয়ে বাড়িতে অথবা জমির আইলে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। মরিচ মসলা জাতীয় ফসল। এতে রয়েছে ভিটামিন সি ও পুষ্টিগুণ। মরিচের জাত ভেদে প্রতি শতকে ফলন ৪০-৪৫ কেজি। মরিচ শুকানোর ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে ঠান্ডা করতে হয়। নিরাপদ পাত্রে সংরক্ষণ সংরক্ষণ করা হয়। যাতে অনেক দিন ভালো থাকে। ভোজন রসিক বাঙালির রসনা বিলাসে প্রতিটি রান্নায় মরিচ বেশ জনপ্রিয় একটি মসলা জাতীয় খাদ্য উপাদান। বৈচিত্র্যময় রান্নায় কাঁচা-পাকা ও শুকনো গুঁড়ো মরিচের ব্যবহার প্রতিদিনই বাড়ছে সমানতালে। বর্তমানে খেত থেকে টসটসে পাকা মরিচ তোলা ও রোদে শুকাতে ব্যস্ত কৃষকরা। বাড়ির উঠোন আর খোলা মাঠজুড়ে মরিচের ঝাঁঝালো গন্ধ। মরিচের মান ভালো থাকায় খুলনা অঞ্চলের হাট বাজারগুলো থেকে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা এসব মরিচ আড়তদারদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

খুলনা কৃষি অঞ্চলে চলতি রবি মৌসুমে (শীতকালিন) মরিচের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। আবাদ কম হলেও ফলন ভালো হয়েছে। এই মৌসুমে মরিচের উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ২৯৬০ মেট্রিকটন। কৃষকরাও ভালো দামে বিক্রি করছেন।

সূত্র জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের ৪ জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মরিচের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৭৩ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ১২৪৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আবাদ হয়েছে ২৮ হেক্টর। মৌসুম শুরু হওয়ার সময় বৈরী আবহাওয়া থাকার কারণে আবাদ একটু কম হয়েছে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের ফলন বাম্পার হয়েছে। ফসল কর্তন চলমান রয়েছে। খুলনা কৃষি অঞ্চলের মধ্যে খুলনা জেলায় ২৩৭ হেক্টও জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ করা হয়েছে ২৪৬ হেক্টর। উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৫৯৩ মেট্রিকটন। বাগেরহাট জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯১ হেক্টর আবাদ করা হয়েছে ৩৬৮ হেক্টর। উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ১৪৮ মেট্রিকটন। সাতক্ষীরা জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২০ হেক্টর। আবাদ করা হয়েছে ৮০৮ হেক্টর। উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৭৯৮ মেট্রিকটন এবং নড়াইল জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২৫ হেক্টর। আবাদ করা হয়েছে ২২৭ হেক্টর। উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৬২১ মেট্রিকটন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহন কুমার ঘোষ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্র পূরণ হবে। বসত বাড়ির আঙ্গিনায় মচির গাছ লাগানো যেতে পারে। কেউ ২০টি মরিচ গাছ লাগালে তার সরা বছর মরিচ কেনা লাগেনা। পানের বরজেও সারা বছর মরিচ হয়। এই মরিচের রয়েছে সুগন্ধ।

তিনি সবাইকে মরিচ গাছ লাগানোর আহ্বান জানান। মরিচ শুকানোর পর ছায়াযুক্ত স্থানে ঠান্ডা করতে হবে। ছয় মাস হতে ১ বছর পর্যন্ত মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে টিনের পাত্র, পলিব্যাগ, মাটির পাত্র, ভুলি বা বস্তার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। দ্বিস্তরবিশিষ্ট পলিথিনের ব্যাগ ও টিনের পাত্রে পলিথিন দিয়ে মরিচ রাখলে রং ও গুণগত মান ভালো থাকে। সংরক্ষিত মরিচ মাঝে মাঝে রোদে দিলে ভালো থাকে। মরিচ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বোটা যেন মরিচ থেকে আলাদা না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত