শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটস শরীরের জন্য কতটা উপকারী, সে সম্পর্কে অনেকেরই কমবেশি ধারণা আছে। ড্রাই ফ্রুটস হলো একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ স্ন্যাক, যা বহু শতাব্দী ধরে সব দেশের মানুষই কমবেশি খায়। ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, শুকনো ফল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন শুকনো ফলগুলো। জেনে নিন কোন ড্রাই ফ্রুটস কতটা উপকারী- বাদাম : বাদাম ভিটামিন ই এর একটি দুর্দান্ত উৎস, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ও একটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এগুলো মনো-অসম্পৃক্ত চর্বিসমৃদ্ধ, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা হাড়ের শক্তি ও পেশীর কার্যকারিতা বাড়ায়। বাদাম খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। পেস্তা বাদাম : পেস্তা খাদ্যতালিকায় ফাইবারসমৃদ্ধ, হজমের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে লুটেইন ও জিক্সানথিন আছে, যা হলো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এটি চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও বয়সের সঙ্গে ম্যাকুলার অবক্ষয় প্রতিরোধ করে। এছাড়া পেস্তা বাদাম মানসিক চাপ ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি উদ্ভিদণ্ডভিত্তিক প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির উৎস। আখরোট : আখরোট ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ও প্রদাহ কমায় সাহায্য করে। এগুলো ভিটামিন ই ও পলিফেনলসহ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। আখরোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এই বাদামে মেলাটোনিন থাকে, যা ঘুমের মান উন্নত করতে পারে। কাজু বাদাম : কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কের মতো খনিজ পদার্থ আছে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের খারাপ বা এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। কাজু হলো আয়রন ও কপারের উৎস, যা লাল রক্তকণিকা গঠন ও শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। এগুলোতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যা চোখের স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে। কিশমিশ : কিশমিশ শক্তির একটি প্রাকৃতিক উৎস, এতে উচ্চ চিনির উপাদান ও প্রচুর ফাইবার থাকে। যা হজমে সহায়তা করে। এগুলো আয়রন ও পটাসিয়ামসমৃদ্ধ। যা স্বাস্থ্যকর রক্ত ও হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিশমিশে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র্যাডিক্যাল ও কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। কিসমিস খাওয়া হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে কারণ এতে ক্যালসিয়াম ও বোরন উপাদান আছে। খেজুর : খেজুর প্রাকৃতিক শর্করার একটি ঘনীভূত উৎস, যা দ্রুত শক্তি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এতে থাকে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার, যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম আছে, যা রক্তচাপ ও পেশীর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এগুলো ফ্ল্যাভোনয়েড ও ক্যারোটিনয়েডসহ অ্যান্টি অক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস। এপ্রিকটস : শুকনো এপ্রিকট ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, যা স্বাস্থ্যকর ত্বক, দৃষ্টিশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলো আয়রন ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এপ্রিকটেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে, যা হজমে সহায়তা করে ও নিয়মিত মলত্যাগ বজায় রাখে। এটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। উপরোক্ত পুষ্টিগুণ পেতে নিয়মিত আপনার খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের শুকনো ফল যোগ করুন। যা আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে। আর অবশ্যই পরিমিত খাবেন, কারণ বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফ্রুটসে ক্যালোরির মাত্রা বেশি থাকে, তাই পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে।