বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ১০৪তম জন্মদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেছে বাঙালি জাতি। নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে গতকাল সারা দেশে তার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে তার সমাধি ও প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, শিশুদের কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার প্রতিকৃতি এবং সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দিবসটি সরকারিভাবে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
গতকাল সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি সেখানে কিছু সময় সেখানে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেখানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।
পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনসহ অন্যান্য সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ভবন এলাকা ত্যাগ করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ বঙ্গববন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদর্শিত পথই আমাদের পথ। তিনি স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি চিরদিন আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি সব সংকটে আমাদের চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবেন। তিনি বাঙালির দুঃখের একমাত্র বাতিঘর। আমাদের বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা এনে দিতে টুঙ্গীপাড়ার এক বীর প্রসূতি মা যাকে জন্ম দিয়ে ধন্য করেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি প্রথম বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাধীন সত্তার বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম মানেই হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্ম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্ম হতো কি না সন্দেহ, যদি এই জনপদে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার জন্ম না হতো।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাব নানা আয়োজন করে। সকালে প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটি প্রেসক্লাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এরপর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নং রোডস্ত জাতির পিতার স্মৃতিস্তম্ভ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জাতির পিতার স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.সামন্ত লাল সেন। সকাল ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এবং সকাল ৮টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ডা. সামন্ত লাল সেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ সময় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন এবং জাতির পিতার আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহান আরা বানু সহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা।
শিশু মনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে হবে : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেছেন, প্রতিটি শিশুর মনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বীজ বপণ করতে হবে যাতে শিশু চলার পথে বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন স্বার্ভভৌম বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, তিনিই নিপীড়িত বাঙালিকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জাগিয়েছেন, একটি স্বাধীন স্বদেশ, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা উপহার দিয়েছেন। এখন দেশকে এগিয়ে নিতে সর্বাগ্রে মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষাই যোগ্য নাগরিক সৃষ্টির ভিত তৈরি করে। গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দীলিপ কুমার বণিক, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ, অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
খাগড়াছড়ি : দেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতেও বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন করা হয়। জেলা প্রশাসন এই কর্মসূচি গ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, আগামী প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে ২০৪১ সালে একটি সুন্দর জাতি উপহার দেয়ার জন্যই দেশরত্ন শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শিশুদের জন্য শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, পুলিশ সুপার মুক্তা ধর, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, শফিকুল ইসলাম ফারুক, দপ্তর সম্পাদক চন্দন কুমার দে, উপ-দপ্তর সম্পাদক নুরুল আযম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শতরুপা চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন, দলীয় সংগঠন ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সাথে নিয়ে খাগড়াছড়ি টাউন হল প্রাঙ্গণে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।