সুসংবাদ প্রতিদিন
ঠাকুরগাঁওয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে সোলার পাম্প
কমছে কৃষকের উৎপাদন খরচ
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষিকাজে বিদ্যুৎ এবং ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সোলার সেচ পাম্প জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সেচ পাম্পের জন্য সোলার প্যানেল ব্যবহার করায় অর্ধেকর থেকে কম খরচে জমিতে সেচ দিতে পেরে মুখে হাসি ফুটেছে এ অঞ্চলের কৃষকের। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী সড়কের আশপাশের জমিতে সোলার প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে দেখা গেছে কৃষকদের। ঠাকুরগাঁওয়ে সোলার প্যানেল বা সৌরবিদ্যুৎচালিত পাম্পে কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ডিজেলচালিত পাম্পের তুলনায় বিঘা প্রতি ১৫০০-২০০০ টাকা কমে সেচ দিতে পারছেন কৃষকরা। শুধু সেচ নয়, বাসাবাড়িতেও সোলারের ব্যবহার বাড়ছে। এতে বিদ্যুতের ওপর চাপ তো পড়ছেই না, উল্টো সোলারে উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। যা এ খাতে অনেক বড় অবদান রাখছে বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক খাদেমুল ইসলাম বলেন, আগে যে জমি সেচ দিতে ৪ হাজার টাকা খরচ হতো- তা এখন ১৫০০ টাকায় হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে। এছাড়া সোলার প্যানেল পরিবেশবান্ধব, এতে কালো ধোঁয়া হয় না। এক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো। অনেক সময় সেচ দিতে না পেরে জমিতেই নষ্ট হয়ে যেত ফসল। ধার-দেনা করে ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক কৃষক আত্মহত্যা করেছে। সময়ের বিবর্তনে আধুনিক হয়েছে সবকিছু। আধুনিক হয়েছে দেশের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও। পাশাপাশি ব্যবহার বেড়েছে সোলার প্যানেলের। অন্যদিকে বাড়তি খরচ বা ঝামেলা না থাকায় সোলারের দিকে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। বিদ্যুৎ নিয়ে বাড়তি চিন্তা মাথা থেকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলে দিয়েছেন কৃষকরা। হঠাৎ লোডশেডিংয়ে পানির পাম্প নষ্ট হওয়ারও চিন্তা নেই এখন। জেলা কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৪৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রায় ১৬২টি সোলার সেচ পাম্প দিয়ে ৭৩৪ হেক্টর জমির সেচ দেওয়া হচ্ছে। সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের বাবু নামের এক কৃষক বলেন, সোলারের মাধ্যমে পানি দিলে সমস্যা হয় না। বাড়তি লোকের প্রয়োজন নেই। আগে যখন শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দিতাম তখন বাড়তি লোক লাগত। খরচও হতো বেশি। সেই সঙ্গে শ্যালো দিয়ে পানি দিতে প্রচুর শ্রম দিতে হতো। তিনি আরো বলেন, এখন আমি সোলারের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিচ্ছি। এখানে কষ্ট অনেক কম। বর্তমানে ১ বিঘা জমিতে সোলার সেচ পাম্প দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। জুলেখা বেগম, মিলন হক, সিকেন্দার আলীসহ আরো কয়েকজন কৃষক বলেন, সোলারের কারণে বর্তমানে অল্প খরচে বোরো ধান রোপণ করা যাচ্ছে। আগে সিরিয়াল দিয়ে পানি নিতে হতো। এখন ইচ্ছেমতো পানি নেওয়া যাচ্ছে। শ্যালোমেশিনে তেল, মেশিন চুরি ও নষ্টের ভয় ছিল। সোলারের কারণে এখন আর এসব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। এদিকে কৃষি অধিদপ্তরের মতে এই সোলার প্যানেলের মাধ্যমে জমিতে সেচ দিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে তাদের উৎপাদন খরচ কমে আসছে। যার ফলে বোরো ধান বিক্রি করে অনেকটাই লাভবান হবেন এই জেলার কৃষকরা। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বোরো মৌসুমে সোলার প্যানেলের সাহায্যে জমিতে সেচ কাজ করছেন কৃষকরা। সোলার প্যানেল ব্যবহারে কৃষকের খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এ জন্য কৃষকদের উৎপাদন খরচও কমে এসেছে। এখন কৃষকরা আরো বেশি লাভবান হতে পারবেন।