আলাপচারিতায় স্বাধীনতা পদকে মনোনীত ডা: হরিশংকর
বাকি জীবনটাও মানুষের সেবা করে যেতে চাই
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ময়মনসিংহ ব্যুরো
স্বাধীনতা পদকে মনোনীত হলেন চিকিৎসা সেবায় অবদান রাখা নগরীর পারমিতা চক্ষু হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: হরিশংকর দাশ। স্বাধীনতা পদক-২০২৪ এ মনোনীত হয়েছেন তিনি। এ খবরে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে চিকিৎসকসহ সাধারণ মহলে। গত ১৫ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত ১০ জনের তালিকা প্রকাশের পর আলোচনায় আসে ডা. হরিশংকর দাশের নাম। এরপর থেকেই জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসক, চিকিৎসক মহল, সুহৃদণ্ডস্বজন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা সিক্ত হতে থাকেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। গত রোববার দুপুরে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে নগরীর পারমিতা চক্ষু হাসপাতালে গেলে কথা হয় ডা. হরিশংকর দাশের সঙ্গে। এ সময় তিনি তুলে ধরেন তাঁর ছাত্রজীবন থেকে কর্মজীবনের নানা আদ্যোপান্ত। এর মধ্যে বিভীষিকাময় ৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৭০ সালে ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে নোয়াখালী অঞ্চলের ভয়াবহতা এবং সর্বশেষ করোনোকালীন সময়ের নির্মম অভিজ্ঞতার নানান গল্প। এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. হরিশংকর বলেন, কর্মজীবনে ৫২ বছর পার করেছি। দীর্ঘ কর্মজীবনের পর আজকের এই মূল্যায়নে আমি অভিভূত ও পুলকিত। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আমাকে এই মহান পদকে মনোনীত করেছেন। যতদিন বেঁচে থাকব, বাকি জীবনটা মানুষের সেবা করে যেতে চাই।
এ সময় তরুণ চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার এই পদক প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে সৎ মনে কাজ করলে মূল্যায়ন একদিন হবেই। যারা সৎ কাজ করবে, তাদের পুরস্কার আছে এবং থাকবেই। তবে কর্মে থাকতে হবে সেবার মনোভাব। একজন চিকিৎসক কখনো টাকার মেশিন হতে পারে না। তবেই তার জীবন হবে স্বার্থক।
ডা. হরিশংকর স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল আমি চিকিৎসক হব, মানুষের সেবা করব। এরই মাঝে ১৯৭১ সালে শুরু হয়ে যায় দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। তখন আমি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিতে আমি চলে যাই, ভারতের আসাম প্রদেশের মাইনকা চর এলাকায়। সেখানে টানা চার মাস মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় জীবনবাজী রেখে কাজ করেছি। এই খবরে পাকবাহিনী টাঙ্গাইল ভূঞাপুর উপজেলার নিকলা গোপাল গ্রামে আমাদের বসতবাড়ী অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। এরপর ৭৪ সালে ডাক্তারি পাশ করে নিয়মিত রোগী দেখা শুরু করি। কখনো টাকা-পয়সার চাহিদা বেশি করিনি। অনেক সময় রোগীর গাড়িভাড়া ও ওষুধ আমাকে দিয়ে দিতে হয়েছে।
এ সময় নির্মম করোনাকালের কথা উল্লেখ করে ডা: হরিশংকর আরো বলেন, করোনাকালে আমি ডায়াবেটিস, কিডনী ও প্রেসারের রোগী। তখন অনেক ডাক্তার কারোনা আক্রান্তদের কাছে যায় না। কিন্তু আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৪ ঘণ্টা আমার হাসপাতাল খোলা রেখে রোগীদের সেবা দিয়েছি। এতে আমি নিজেও করোনা আক্রান্ত হই। কিন্তু রোগীদের ছেড়ে আমি পালিয়ে যাইনি। এভাবেই আজীবন রোগীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।
সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের নিকলা দাশ বারে প্রয়াত ইন্দুভূষণ দাশ ও রেণুকা প্রভা দাশের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ডা: হরিশংকর দাশ। এরপর ১৯৭৪ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করে এই হাসপাতালেই সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। পরে তিনি ১৯৮৩ সালে চক্ষু চিকিৎসায় উন্নত ডিগ্রী নিতে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যান। সেখান থেকে ডিও এবং এমএএমএস ডিগ্রী লাভ করে দেশে ফিরে ১৯৮৪ সালে পারমিতা চক্ষু হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই প্রতিদিন এক ঘণ্টা বিনামূল্যে রোগী দেখেন এবং প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতেও ফ্রি রোগী দেখেন তিনি। খ্যাতিমান অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হরিশংকর দাশ বিগত কর্মজীবনে মুক্তিযোদ্ধা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী-পরিচিতজন ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ অসংখ্য গরিব ও অসহায় রোগীদের কোনো পরামর্শ ফি ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন বলেও জানা যায়।