বই পড়ে বিদেশি জাতের মুরগি পালন করে আর্থিক সংকট ঘুচিয়ে চাঁদপুরের হাইমচরে নিজের ভাগ্য বদলেছেন অনিক মহাজন অন্তর। নিজের জমানো টাকায় কেনা ৬টি মুরগি থেকে তার সংগ্রহে এখন রয়েছে ৬ শতাধিক বিদেশি মুরগি। স্থানীয় পর্যায়ে ডিম ও মাংসের চাহিদা মিটিয়ে তিনি বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও। অনিক এইচএসসি পাস করে স্নাতকে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন। হাইমচর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে, উপজেলায় কক, লেয়ার ও ব্রয়লার জাতের মুরগিই বেশি পালন হয়। সব মিলিয়ে বছরে পোল্ট্রি মুরগি থেকে প্রায় ০.১২ লাখ টন মাংস ও ডিমের চাহিদা অর্জিত হচ্ছে। উৎসাহ বাড়াতে হাইমচরে ৩০ জন নিবন্ধিত পোল্ট্রি খামারিকে আর্থিক সহায়তাও করা হয়েছে। অনিক বলেন, স্কুলজীবনে অষ্টম শ্রেণির কৃষিশিক্ষা বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের জমানো টাকায় মাত্র ছয়টি বহুজাতিক মুরগি কিনে পালন শুরু করি। এরপর মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে নিজের হাতে ভ্যাকসিনসহ সকল উপকরণ প্রয়োগের মাধ্যমে বাচ্চা বড় করতে থাকি। বর্তমানে আমার সংগ্রহে ৬ শতাধিক মুরগি রয়েছে। যা আমি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছি। এমনকি মুরগির বিষ্ঠাগুলোও আমি চাষাবাদের কাজে লাগাচ্ছি। মুরগির খাবারের মূল্য বৃদ্ধিতে খুব বিপাকে রয়েছি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমার মুরগি পালন দেখতে আসায় আমারও ভালো লাগে। আমি আরও এগিয়ে যেতে সংশ্লিষ্টদের থেকে আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। সরেজমিনে দেখা যায়, ৪ শতাংশ জায়গাজুড়ে বিদেশি জাতের মুরগি পালন করছেন অনিক। তার সংগ্রহে ইউরোপিয়ান সিল্কি, বাফ পলিশ ক্যপ, ইয়োকমা, সিলভার টেল বেন্থাম, বাফ বেন্থাম, জাপানিজ রেড মলটেড বেন্থাম, কলেম্বিয়ান লাইট ব্রাহামা, কলেম্বিয়ান বাফ ব্রাহামা, রেড মিলি, ফিজেল সিল্কি, মালয়েশিয়ায়ন সেরামা, মিশরীয় ফাওমি প্রজাতির মুরগিও রয়েছে। মুরগিগুলো ছোট থেকে বড় হয়ে যাওয়ার পর অনলাইনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তিনি এগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছেন।
এসব বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাকসুদ আলম বলেন, আমরা সবসময়ই সহযোগিতা নিয়ে পোল্ট্রি খামারিদের পাশে রয়েছি। গেল কয়েক মাসে ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯০ জন পোল্ট্রি খামারিকে প্রণোদনা প্রদানসহ সময়মতো টিকা প্রদান, কৃমিনাশক ওষুধ বিতরণ ও বিভিন্ন ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা পরামর্শ এবং হাসপাতালে আগত খামারিদের পোল্ট্রি মুরগির রোগ অনুসন্ধান করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করছি। তিনি আরও বলেন, অনিকের মতো উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে আমরা তাদের নিয়ে নানা সময়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। যেখানে মুরগির ফাউল, টাইফয়েড, কলেরা, ব্রংকাইটিস রোগ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এতে করে উদ্যোক্তারা সময়মতো মুরগিকে টিকা প্রদান, কোয়ারেন্টাইনে রাখা, জীবাণুনাশক দিয়ে খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, অসুস্থ অবস্থায় টিকা ব্যবহার না করা, হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শ না নেওয়াসহ যাবতীয় বিষয় বলছি। একইসঙ্গে আর্থিক সংকট কাটাতে ঋণ সুবিধা সম্পর্কিত পরামর্শও দিয়ে আসছি।