সুসংবাদ প্রতিদিন
নেত্রকোনায় ২৬ কোটি টাকার চাল কুমড়া বিক্রির আশা
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
নেত্রকোনা জেলায় এবার চাল কুমড়ার বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখেমুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে। হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলার পতিত জমিতে এসব কুমড়ার উৎপাদন হয়েছে। খরচের তুলনায় কয়েকগুণ লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। স্থানীয় কৃষি বিভাগ আশা করছে, জেলায় এ বছর আনুমানিক সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল কুমড়া উৎপাদিত হবে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২৬ কোটি টাকা। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার হীরাকান্দা, হাতিমঞ্জি, রহিমপুর, চান্দুয়াইল, বাদাম তৈল, পালপাড়া, ধোপাপাড়া, চণ্ডিগড়, বেলতলী কোণাপাড়া, বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর, সিংধাসহ ৩০টি গ্রামে এবার রবি শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান চাষের চেয়ে শাক-সবজির চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেকেই তাদের জমিতে চাল কুমড়া, লাউ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ডাটাসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজি চাষ করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, নেত্রকোনায় নানাবিধ কারণে শত শত হেক্টর জমি অনাবাদি বা পতিত থাকতো। ‘এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা, কৃষি বিভাগের নানা রকম প্রচার প্রচারণা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, যান্ত্রিকীকরণ, প্রণোদনা, কৃষি খাতে বিপ্লব এবং সময়ের চাহিদা পূরণে কৃষকেরা অনাবাদী পতিত জমি চাষাবাদে ক্রমশ উৎসাহিত হয়ে উঠছেন। গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় নেত্রকোনার ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ২৬৫ হেক্টর জমিতে চাল কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরাও খুশি। কীটনাশকমুক্ত এ চাল কুমড়া স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫-২৬ মেট্রিক টন চাল কুমড়া উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষকরা জানায়, প্রতি ১০ শতক বা ১ কাঠা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ চাল কুমড়া উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় পাইকারদের কাছে প্রতিটি চাল কুমড়া গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ১ কাঠা জমি থেকে কৃষকের আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কলমাকান্দা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী নরল্লাপাড়া গ্রামের শফিকুল আলম জুঁই বলেন, ‘এসব সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শত শত একর জমি অনাবাদি, পতিত অবস্থায় থাকতো। এলাকার মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাব দেখা দিতো।
হতদরিদ্র নিম্ন আয়ের মানুষ স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য কাজের সন্ধানে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতো। অনেকেই কাজ না পেয়ে সীমান্তে চোরাকারবারসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকত।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনাবাদি, পতিত জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসায় ধানসহ নানা ধরনের শাকসবজি আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকেরা বাড়ির আঙিনায় বা আবাদি, অনাবাদি জমিতে লাউ, শসা, বেগুন, ঝিঙ্গা, কপি, টমেটো, চাল কুমড়াসহ নানা ধরনের রবিশস্য আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। গতবার দেড় একর জমিতে চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া ও ফুলকপি আবাদ করে ৯ লাখ টাকা আয় করেছিলাম। এবার আড়াই একর জমিতে চাল কুমড়া, টমেটো, বেগুন ও বাদাম চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার চাল কুমড়া, টমেটো, বেগুন বিক্রি করেছি। আশা করছি, এ বছর ২০ লাখ টাকা আয় হবে।’ রংছাতি ইউনিয়নের কালিহালা গ্রামের কৃষক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমি ৫ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে কুমড়া চাষ করেছি। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি।’ বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার অনেক জমি পতিত থাকতো। এ বছর ৩০ কাঠা জমিতে চাল কুমড়া করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় পাইকাররা জমি থেকেই মণপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কিনে নিচ্ছেন।’ নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘পতিত জমিতে ভালো শাকসবজি উৎপাদিত হওয়ায় কৃষকেরা দিন দিন শাকসবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলশ্রুতিতে নেত্রকোনায় ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।’