চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কঠোর ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে অভিবাসন আবারও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোয় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অভিবাসীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে ইতোমধ্যেই উচ্চমূল্যে থাকা বাসার ভাড়া আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। গতকাল ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং স্নাতক ভিসা আবেদনের জন্য আগামীকাল শনিবার থেকে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তার ওপর আরো জোর দেবে অস্ট্রেলিয়া। একইসঙ্গে বার বার নিয়মভঙ্গকারী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর নিয়োগ করার ক্ষমতা স্থগিত করতে পারবে সরকার।
এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল বলেছেন, দেশটির ভঙ্গুর ব্যবস্থাকে ঠিক করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ আগামীকাল শনিবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া পদক্ষেপগুলো দেশে অভিবাসন হার কমিয়ে দেবে।’
প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে আসতে চাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কমানোর লক্ষ্যে দেশটিতে ‘জেনুইন স্টুডেন্ট টেস্ট’ নামে একটি নতুন পরীক্ষা চালু করা হবে। একইসঙ্গে ঘুরতে এসে দেশটিতে থেকে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করতে ভিজিটর ভিসাগুলোতে ‘নো ফারদার স্টে’ শর্ত আরোপ করা হবে।
এর আগে, গত বছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে অনিয়ন্ত্রিত কর্মঘণ্টাসহ করোনাকালীন সুযোগ-সুবিধাগুলো বন্ধ করতে বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল দেশটির সাবেক সরকার। এতে দুই বছরের মধ্যে দেশটিতে অভিবাসীর পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেকে নামানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছিল।
করোনা মহামারির কারণে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও কর্মীরা প্রায় দুই বছর অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থাকার কারণে দেশটিতে কর্মী ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। এ ঘাটতি পূরণে এবং ব্যবসায়িদের কর্মী নিয়োগে সহায়তার লক্ষ্যে ২০২২ সালে বার্ষিক অভিবাসন সংখ্যা বাড়িয়েছিল দেশটি। এতে করে অস্ট্রেলিয়ায় হঠাৎ আন্তর্জাতিক কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এবং এরমধ্যেই উচ্চ মূল্যে থাকা বাসার ভাড়া আরো বেড়ে যায়।
গতকাল অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস প্রকাশিত ডেটায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে নেট অভিবাসন ৬০ শতাংশ বেড়ে ৫ লাখ ৪৮ হাজার পৌঁছেছে। এই সংখ্যা ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরের অভিবাসীর চেয়ে বেশি। জুন পর্যন্ত দেশটিতে ৪ লাখ ১৮ হাজার অভিবাসী ছিল। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা রেকর্ড হারে বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে এ সংখ্যা বেড়ে ২.৫ শতাংশ হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটির জনসংখ্যা ছিল ২৬ কোটি ৮ লাখ। অস্ট্রেলিয়ায় রেকর্ড অভিবাসীদের অধিকাংশই ভারত, চীন এবং ফিলিপাইন থেকে আসা শিক্ষার্থী। তারা দেশটিতে শ্রম সরবরাহ প্রসারিত করার মাধ্যমে মজুরির চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনলেও আবাসন খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছেন। তাদের কারণে এরমধ্যেই উচ্চমূল্যে থাকা বাসার ভাড়া আরো বেড়ে গেছে। এমনকি বাসার টু-লেটের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে কমেছে এবং নির্মাণ খরচ বাড়ার কারণে নতুন আবাসন তৈরিতেও এসেছে সীমাবদ্ধতা। ও’নিল বলেছেন, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সেপ্টেম্বর থেকে অভিবাসনের মাত্রা কমতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট ভিসা অনুদান আগের বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কমেছে।