ঢাকা ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী শরিফুল

হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী শরিফুল

একসময় নিয়ম করে ঠিকমতো খাবারও জুটত না। আর্থিক টানাপড়নে লেখাপড়াও খুব বেশি দূর এগোয়নি। ছিল না কোনো কাজের অভিজ্ঞতাও। তারপর একটি হাঁসের খামারে জীবনের বাঁক বদলে যায়। বলছিলাম যশোরের শার্শা উপজেলার যুবক শরিফুল ইসলামের কথা। কথা বলে জানা যায়, বছর তিনেক আগে দশটি হাঁস দিয়ে ছোট একটি খামার শুরু করেন। অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও পরিচর্যা চালিয়ে যান খামারের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের ছোট কলোনির আলমপুর গ্রামের খোরশেদ আলম ও হনুফা খাতুন দম্পতির সেজ ছেলে শরিফুল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হাঁসের খামারটি ঘুরে দেখার পর মুগ্ধ হতে হয় ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে। মা-বাবার পাশাপাশি স্ত্রী রুনা পারভীনও তাকে এই পর্যায়ে আনতে সহায়তা করেছেন বলে জানান শরিফুল। শরিফুল বলেন, প্রতিটি ডিম ১৫ টাকা হিসাবে পাইকারি বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে তিন মাসে লাভ হয়েছে- ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আমাদের খামারের সব হাঁসই ‘ক্যাম্বেল’ জাতের। একটি হাঁস তিন মাস একাধারে ডিম দেয়। ১৫-২০ দিন বিরতি দিয়ে আবারও ডিম দেয়। হাঁসের বয়স ১৭ মাস হলে ওরা ডিম কম দেয়, তখন ওগুলো বিক্রি করে দেই। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শরিফুলের খামারে ২৫০টি হাঁস রয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে প্রতিটি হাঁস ৪৫০ টাকায় বরিশাল থেকে কেনেন। বাড়ির পাশে ‘মাখলার বিলে’ সারাদিন হাঁসের ঝাঁক নিয়ে থাকেন শরিফুল। হাঁস বাড়িতে পৌঁছানোর পর তাদের পরিচর্যার দায়িত্ব পড়ে মা আর স্ত্রীর ওপর। আর হাঁসের ওষুধ, খাবার কেনা ও ডিম বিক্রির বিষয়টা দেখেন বাবা। এটা তাদের নিত্যদিনের কাজ। তিনি বলেন, তিন বছর ধরে হাঁস পালন করছি। নিজে না খেয়ে থাকলেও হাঁসগুলোকে দেখভাল করেছি সন্তানের মতো। আল্লাহ মুখ তুলেছেন, তাই অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে, পার করতে পেরেছি অভাবের দিনগুলো।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে শরিফুলের হাঁসের খামার দেখতে আসেন, পরামর্শ নেন। এছাড়া তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক তরুণ স্বল্প পরিসরে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। কথার বলার এক পর্যায়ে অতীত স্মরণ মনে করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন শরিফুল। বলেন, শুরুটা সহজ ছিল না। ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমের ফল এই খামার। নিজে তো পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই খামার থেকে যা আয় করি তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণ করি। প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি বলেন, সংসারে খরচ সামলে খামারে হাঁসের সংখ্যা বাড়াতে পারছি না। সরকারি সহযোগিতা পেলে খামারটি বড় করতে পারতাম। কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে পারতাম।

শার্শার বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, শরিফুলের হাঁসের খামার সত্যিই ‘অনুকরণীয়’। হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে তিনি সংসারের অভাব দূর করেছেন। তার এ সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো অনেকে হাঁসের খামার তৈরি করছেন। এতে এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে। শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, খাল-বিলে ভরা এ উপজেলায় হাঁস পালন ব্যাপক সম্ভাবনাময় একটা ব্যবসা। উপযোগী পরিবেশের কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে খামার গড়ে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছেন। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকেও হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছি। হাঁস ও ডিমের ব্যাপক চাহিদা এবং বিপণন ব্যবস্থা ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত