অনেকদিন ধরে চলে আসা ঊর্ধ্বমুখী বাজারে কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে সাধারণ মানুষ। যদিও এই দাম কমে যাওয়াকে ক্রেতারা ক্ষণস্থায়ী বলছেন। গতকালের বাজারে সবজি বিক্রি হয় তুলনামূলক কম দামে। তবে সবজি কম হলেও মাংসের বাজার চড়া। সরকার গরুর মাংস, মুরগির মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তার কোনো তোয়াক্কাই করছে না বিক্রেতারা। তারা বিভিন্ন অজুহাতে এসব মাংস বিক্রি করছে উচ্চমূল্যে। এদিকে গত সপ্তাহেও সব গরুর মাংসের দোকানে মূল্য তালিকা থাকলেও আজকে কোনো দোকানেই তা দেখা যায়নি। মূল্য তালিকা না থাকার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতাদের উত্তপ্ত উত্তর ‘কোনো মূল্য তালিকা নাই’।
গতকাল রাজধানীর বাজারের আজকের চিত্র। সবজির বাজার রয়েছে আগের তুলনায় নিম্নমুখী। মুদি দোকানের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। আর মাংসের বাজার রয়েছে নিয়ন্ত্রণহীন।
গতকালের বাজারে শিম ৫০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, মূলা ৫০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ১০০-৬০ টাকা, ক্ষীরাই ৫০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করল্লা ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, সজনে ২০০ টাকা, কচুরমুখী ১৪০, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হয় ৬০ টাকা করে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। তবে শসা, কচুরমুখী ও কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। আর পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়ার দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। সবজির দাম কমার প্রসঙ্গে বিক্রেতারা বলছেন, সবজির দাম কয়েকদিন পরে আরও কমে যাবে। ক্রেতারা বলছেন, আজকে তো দাম কম বুঝলাম। আজকে কিনে না হয় কিছুটা শান্তি পেলাম। কিন্তু কালকে আবার কত দাম বাড়ে তা তো আমরা জানি না। তারা জানান দাম কমাটা আমাদের জন্য সুসংবাদের মতো। খাদ্য দ্রব্যের দাম কমলে সত্যিই আমাদের অনেকটা ভালো লাগে।
এছাড়া গতকাল মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৬০-৮০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৪০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়- পেঁয়াজের দাম আবারও কমেছে ১০-২০ টাকা। আর দেশি রসুনের দাম কমেছে ৩০ টাকা এবং চায়না রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। পেঁয়াজের নিম্নমুখী দাম নিয়ে বিক্রেতারা বলেন, পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরলেও মাংসের বাজার রয়েছে অস্থিরতা। সরকার ব্রয়লার মুরগির মাংসের কেজি ১৭৫ টাকা এবং গরুর মাংসের কেজি ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও গতকাল বাজারের কোনো দোকানে এই দামে এসব মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়নি।
গতকাল ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৯৫-২১৫ টাকা, কক মুরগি ২৯৩-৩১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১৫ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হয়। নির্ধারিত দামে কেন ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে না জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, সরকার যে কী দাম নির্ধারণ করে তা আমরা বুঝি না। ১৭৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, অথচ আামাদের কেনাই পড়েছে ১৯৪ টাকা। তাহলে আমি ১৭৫ টাকায় কীভাবে বিক্রি করবো? এ সময় তিনি তার ক্রয় রসিদও দেখান।
আর গরুর মাংসের দাম নিয়ে বিক্রেতারা বলেন, গরুর দাম তো বেশি। আমরা কম দামে বিক্রি করব কীভাবে?
একজন বিক্রেতা জানান, আমরা মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি করি। যার কাছে যেই দামে পারি সেই দামেই বিক্রি করি। সরকার নির্ধারিত দামে কেন বিক্রি করছেন না জানতে চাইলে তারা বলেন, সরকার গাড়িতে করে যে মাংস বিক্রি করে সেগুলোতে কলিজা, মাথার মাংসসহ সব জায়গার মাংস মিশানো থাকে তাই দাম কম। আমরা আলাদা জায়গার মাংস বিক্রি করি তাই দাম বেশি।
এছাড়া গতকালের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ২০০০-২৮০০ টাকা, রুই মাছ ৪৫০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৯০০-১৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কই মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১৩০০ টাকা, কাজলী ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গতকাল মুদি দোকানের পণ্যের দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে এক লাফে ৪০ টাকা বেড়ে গেছে খেসারির ডালের দাম। গতকাল ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১৬০-১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে খেসারির ডাল ছিল ১৬০ টাকা কেজি, আজকে তা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি।
খেসারির ডালের দাম কমে যাওয়া নিয়ে এক বিক্রেতা আমিনুল বলেন, ঘাটতি ছিল বলেই দাম বেড়ে গিয়েছিল। এখন ঘাটতি কমে যাওয়ায় দাম আবার কমে গেছে। এছাড়া মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। গতকাল প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়।