সুসংবাদ প্রতিদিন

বাগেরহাটে তৈরি কাঠের সাইকেল যাচ্ছে ইউরোপে

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে সাইকেল। চাকা থেকে শুরু করে পুরো কাঠামোই কাঠের তৈরি। দেখতে খেলনা মনে হলেও দেশের বাইরে এই সাইকেল ব্যবহার হচ্ছে বাহন হিসেবে। বাগেরহাটে তৈরি এই সাইকেল বাংলাদেশের কোনো বাজারে বিক্রি হয় না। সাইকেলগুলো তৈরি হয় শুধুই ইউরোপের বাজারের জন্য। কাঠ দিয়ে নিপুণ হাতে ‘বেবি ব্যালেন্স সাইকেল’ নামে বিশেষ ধরনের এ সাইকেল তৈরি করেন বাগেরহাটের স্থানীয় ৩০ জন নারী-পুরুষ। এদের কেউ চাকা তৈরিতে অভিজ্ঞ, কেউ তৈরি করেন সাইকেলের হ্যান্ডেল বা ফ্রেম। রঙ দিয়ে পলিশ করা হয়, করা হয় আকর্ষণীয়। ৩০ জন কর্মী মিলে প্রতিদিন তৈরি করেন অন্তত ৩০টি সাইকেল। দেশের নতুন রপ্তানি পণ্য এই সাইকেল তৈরির উদ্যোক্তা বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ন্যাচারাল ফাইবার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু বাইসাইকেল নয়, কাঠ দিয়ে তারা তৈরি করছেন সান বেড, হোটেল বেড, কুকুর-বিড়ালের খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব আরও বেশ কিছু আকর্ষণীয় ফার্নিচার। যার চাহিদা তৈরি হয়েছে বিশ্ববাজারে। প্রথমবারের মতো নিজ দেশের পণ্য ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করতে পেরে খুশি শ্রমিকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানায় কাঠের সাইকেল তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। কেউ তৈরি করছেন চাকা, কেউ তৈরি করছেন হ্যান্ডেল, আবার কেউ সাইকেলের ফ্রেম। সবশেষে শ্রমিকদের নিপুণ হাতে কাঠের বাইকে নানান রং দিয়ে পলিশ করা হচ্ছে। বিসিক শিল্প নগরীর ন্যাচারাল ফাইবার কারখানার সুপার ভাইজার আব্বাস আলী বলেন, আকাশমণি, মেহগনি ও গামারিসহ বিভিন্ন ভালো মানের কাঠ দিয়ে বিদেশি শিশুদের জন্য ‘বেবি ব্যালেন্স সাইকেল’ তৈরি করি। এই সাইকেল তৈরি করতে দেড় থেকে দুই দিন লেগে যায়। একটি সাইকেল তৈরি করতে ১১টি পার্টের প্রয়োজন হয়। কারখানার বিভিন্ন স্থানে পার্টগুলো তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট একটি স্থানে সব পার্ট একত্র করে একটি সাইকেলে রূপান্তরিত করা হয়। পরে রং করার পর পুরোপুরি তৈরি হয় বেবি ব্যালেন্স সাইকেল। কারখানার নারী শ্রমিক পূজারানি বলেন, এখানে কাজ করে যে বেতন পাই তাতে আমার সংসার এবং ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলে। বাচ্চাদের সাইকেল তৈরি করতে পেরে আমরা খুশি।

রং মিস্ত্রি মামুন শেখ বলেন, প্রতিদিন কারখানায় প্রায় ৩০টি সাইকেল তৈরি করা হচ্ছে। আমরা এই কাজগুলো করে আসলেই আনন্দিত। ভাবতেই অবাক লাগে, আমার হাতের রঙের ছোঁয়া ইউরোপে যাচ্ছে। সত্যিই খুব ভালো লাগে। আমাদের দেশে যদি এসব কাজের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পায় তাহলে দেশে থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর ন্যাচারাল ফাইবার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, আমরা সাধারণত নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে পণ্য তৈরি করতাম। অতি সম্প্রতি ইউরোপের কাস্টমার পেয়েছি, যারা পরিবেশবান্ধব পণ্য বাজারজাত করতে আগ্রহী। যারা কাঠের কিছু প্রোডাক্ট নিতে চায়, তাদের কাছ থেকে কাঠের বেবি ব্যালেন্স সাইকেলের অর্ডার পাই। তারা ৪০ হাজার পিস অর্ডার দিয়েছে, আমরা ২০ হাজার পিস এক্সপোর্ট করেছি। বাকি ২০ হাজার পিসও খুব তাড়াতাড়ি যাবে। তিনি বলেন, রপ্তানির জন্য আমাদের সরকার ১০ শতাংশ প্রণোদনা দিত। সম্প্রতি তা কমিয়ে দিয়েছে। প্রণোদনা কমিয়ে দিলে মার্কেটে টিকে থাকা মুশকিল হবে। আমাদের প্রোডাক্টগুলো সরকারের খরচে প্রচার করতে হবে। সরকারের আন্তরিকতা থাকলে আমাদের প্রোডাক্ট মার্কেটে টিকে থাকবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের বাগেরহাটের প্রমোশন অফিসার শরিফ সরদার বলেন, বিসিক শিল্প নগরীতে মুস্তাফিজুর রহমান সবসময়ই ইউনিক আইডিয়ায় কাজ করেন। বর্তমানে কাঠের সাইকেল তৈরি করে ইউরোপে রপ্তানি করছেন। এটি শতভাগ রপ্তানিযোগ্য একটি পণ্য। এর মাধ্যমে যে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে সেটা নয়। স্থানীয়ভাবে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সব সময় উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে যাচ্ছি। এ ধরনের পণ্য বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম বাড়বে। এভাবে দেশীয় পণ্য বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।