যুদ্ধবিরতির নতুন আবেদন নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনীয় গুতেরেস গতকাল শনিবার গাজা সীমান্ত সফরে যান। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ইসরায়েল বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালানোর হুমকি দেওয়ার পর, এই সফরের ঘোষণা দিলেন গুতেরেস। মিসরের সীমান্তবর্তী শহরটিতে হামলা না চালানোর আহ্বান উপেক্ষা করেই এই হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। মিশরের উত্তরাঞ্চলীয় সিনাই উপত্যকার আল আরিশের একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন গুতেরেস। সেই সাথে রাফায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মীদের সাথে সাক্ষাৎও করবেন তিনি। এই সীমান্তেই গাজাবাসীর জন্য বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক ত্রাণসামগ্রী মজুদ করা হয়েছে। এছাড়া এখান দিয়েই রাফাহ শহরে ত্রাণ পৌঁছানোর অন্যতম প্রবেশ পথ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অঞ্চলে আরও বেশি পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা আসার পথ সুগম করতেই গুতেরেসের এই সফর।
গত অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পরপরই গাজার সাথে মিসরের এই সীমান্ত সফর করেছিলেন গুতেরেস। আর এই রমজানে মুসলিম দেশগুলোতে বার্ষিক সংহতি ভ্রমণের অংশ হিসেবে মিসর ও জর্ডান সফর করছেন তিনি।
যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছে গাজার অন্তত ২০ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। যদিও গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ। তবে পুরো উপত্যকাজুড়েই বেসামরিক নাগরিকদের দুর্দশা বাড়ছে। এর আগে, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আসন্ন বলে সতর্ক করেছিল জাতিসংঘ। যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে পুরো অঞ্চলেই দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৩২ হাজার ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত কমপক্ষে ৭৪ হাজার ২৯৮ জন। আর হামাসের হামলায় এক হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের ওপর ভেটো প্রয়োগ : ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি নতুন প্রস্তাবের ওপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট গত সোমবার স্থগিত করা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন খসড়া প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধান মিত্র এবং সামরিক সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ‘অবিলম্বে এবং টেকসই একটি যুদ্ধবিরতির অপরিহার্যতা’ উল্লেখ করে এবং হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করেছিল।
রাশিয়া এবং চীন শুক্রবার সেই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ‘নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গতকাল ভোটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল, তবে খসড়াটির আরও আলোচনার অনুমতি দেওয়ার জন্য এটিকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে মারাত্মক আক্রমণে অনুপ্রবেশের সময় ১,১৬০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েল গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী হামাসকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক অভিযানে ৩২ হজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এরইমধ্যে জাতিসংঘ এই অঞ্চলে আসন্ন দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছে।