ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে ড. খ মহিদ উদ্দিন

পৃষ্ঠপোষক, আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা যে-ই হোক তালিকা করে কঠোর ব্যবস্থা

পৃষ্ঠপোষক, আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা যে-ই হোক তালিকা করে কঠোর ব্যবস্থা

কিছু দিন আগেও ঢাকায় ৩৪টি কিশোর গ্যাং ছিল। সম্প্রতি এই তালিকা বড় হয়েছে। এই কিশোর গ্যাং কালচারের নেপথ্যের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের তালিকা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে যে বড় ভাই থাকুক না কেন, যেই রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন, শিশুদের ভিন্নভাবে অপরাধকাজে ব্যবহার করা অপরাধ। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও তালিকা করে প্রচলিত আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিশোর অপরাধ বৃদ্ধিতে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে গতকাল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির কারণ নিয়ে এ ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত আইজিপি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, অপরাধীর কোনো দল নেই। থাকার কথা না। অপরাধীই বরং কোনো কোনো দলে শেল্টার নেয়। অতীতে আমরা তাই দেখেছি। কিশোর অপরাধ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়েছে। কিশোর অপরাধের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

ডিএমপির পক্ষ থেকে বলতে চাই, কিশোর অপরাধের পেছনে যদি কেউ কোনো পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা আছে বলে আমি মনে করি না।

কিশোর অপরাধের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিশোর অপরাধী গ্যাং ছিল ৩৪টি। এটা সম্প্রীতি বেড়েছে। আমরা বেশ কিছু গ্যাংকে নতুন করে শনাক্ত করেছি। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই কিশোর অপরাধে যারা জড়িত বা সংশ্লিষ্ট তাদের বিরুদ্ধে আইনের মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এই কিশোর অপরাধে যেন কেউ পৃষ্ঠপোষকতা না করে। কার্যক্রমের জন্য কিশোরদের যেন ব্যবহার করা না হয়। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।

মিরপুরে কিশোর গ্যাং কালচারের বলি মিরপুরের ফয়সাল। কিন্তু ফয়সাল মার্ডারে জড়িত সেই কিশোর গ্যাংকে যে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন পল্লবী, মানিকদী এলাকার ভূমিদস্যু আব্বাস। যিনি স্থানীয়ভাবে সরকার দলীয় রাজনীতি করেন।

এমন অবস্থায় পৃষ্ঠপোষক, আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের তালিকা করবেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপরাধীর কোনো দল নেই। পৃষ্টপোষকদের নাম আসছে। তাদের তালিকা করা হবে। নাম কিছু এসেছে। আরো কিছু আসলে তালিকা হালনাগাদ করা হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, মিরপুরের ঘটনাসহ কিশোর গ্যাং কালচারে যদি কোনো রাজনৈতিক নেতার ইন্ধন থাকে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা এখন পরিণত। কিন্তু এখন যারা কিশোর তারাই কিন্তু আগামীর কর্ণধার, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, আইজিপি। কিন্তু সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারণে কিশোর অপরাধও বাড়ছে। যেটা এখন বিশ্বব্যাপী মাথাব্যথার বড় কারণ। যথাসম্ভব আমাদের ইতিবাচক মানসিকতাকে এগিয়ে নিতে হবে, নেতিবাচক কাজকর্ম ও মানসিকতাকে বাদ দিতে হবে। আমরা কিশোর অপরাধের ভয়াবহতা দেখছি। এটা নিয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার। কারণ ওদের রাইট ট্রাকে রাখার এটাই সময়।

কালচারাল আগ্রাসনকে মেনে নিতে হচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশের এ অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, সম্প্রতি কিছু কিছু মুভি বা সিরিজে সাইকোলজিক্যাল একধরনের পারভারসন দেখানো হচ্ছে। যেটা দেখে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ফিরে আসার চাইতে বেশি করে এট্রাকশন বা ফ্যান্টাসি কাজ করছে। আসলে বাচ্চাদের একটা বয়স পর্যন্ত অনেক কিছুই দেখানো যায় না। এসব খেসারত জবি ছাত্রীর আত্মহনন। যে কী না কিছুদিন আগেও আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলেছে।

তিনি বলেন, রাজনীতি কিন্তু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। আমরাই রাজনীতির মধ্যে থাকি। গ্যাং শব্দটাই খারাপ। কিশোর গ্যাং কালচারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ আছে সেটি ঠিক নয়, তবে বাস্তবতা হলো, এক ধরনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিবেশে চাপ না থাকলেও আমরা বিচ্ছিন্ন নই।

শিশু আইনের সংস্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, আইন হচ্ছে সর্বশেষ পদক্ষেপ। আইনের জন্য মানুষ না, মানুনের জন্য আইন। আমাদের যে শিশু আইন আছে, সেখানে শিশুর অধিকার ও সংজ্ঞা নিয়ে কিছুটা দ্বিধা ছিল। তবে এখন কিন্তু শিশু বলতে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু। আগে কোথাও ১৪ কোথায় ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বলা হতো। আইনের প্রয়োগের চাইতে আমার কাছে মনে হয়, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটা আদর্শিক পরিবেশ তৈরি করা উচিত বলে মনে করি।

কিশোর অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাফিলতি আমাদের আছে। কিন্তু আমাদের গাফিলতিই শুধু নয় সবারই আছে। ডিএমপিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এটা নিয়ে কাজ করছে। আমাদের আসলে সবাইকে সব জায়গা থেকে এই বিষয়ে কাজ করতে হবে।

আমরা অনেক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চাই। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। টিকটকারদের অনৈতিক কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা তো তখনই নেওয়া যায় যখন এটি আইনের সীমা লঙ্ঘন করে বা অপরাধ হয়ে যায়। আমি অনেক সভায় কথা বলেছি এ সবের কুফল সম্পর্কে। তবে আমার বাহিনীতে এটার কুফল নিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি আইন লঙ্ঘন করে বা অপরাধ করার মতো কনটেন্ট তৈরি করে তবে আইনের মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে মদদ দাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতীত কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করছে। স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তি, চাঁদাবাজি, মিছিল-মিটিং, দখলবাজি, দলবাজি ইত্যাদি কাজে যাতে শিশু কিশোরদের ব্যবহার করা না হয় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে রাজনৈতিক উচ্চ পর্যায় থেকে প্রশাসনের সর্বস্তরে সদিচ্ছা পোষণ জরুরি। এজন্য তিনি দশ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

প্রতিযোগিতায় প্রস্তাবের পক্ষে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ এবং বিপক্ষে সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে। বিচারকদের রায়ে বিতর্কে বিজয়ী হয় সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত