ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্যরকম

অ্যান্টার্কটিকার জলদস্যু!

অ্যান্টার্কটিকার জলদস্যু!

অ্যান্টার্কটিকা নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভাসে ধবধবে সাদা বরফ। বরফের নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত থেকে শুরু করে আগ্নেয়গিরি! কেউ কেউ বিশাল এই প্রাণহীন বরফভূমিকে বলেন বরফের মরু। অবশ্য একেবারে প্রাণহীন নয়। বরফে ঢাকা এই মহাদেশে বরফচর প্রাণীদের বসবাস। অথচ, সেই আন্টার্কটিকাতেও জলদস্যু! অবাক করার মতোই ব্যাপার, যেখানে মানুষেরই স্থায়ী বসবাস নেই, সেখানেও লুটতরাজ চলছে জলদস্যুদের। অবশ্য সাধারণ মানুষের জাহাজে লুঠতরাজ চালায় না তারা। তারা লুট করে প্রকৃতির ভারসাম্যতাকে। মূলত অ্যান্টার্কটিকা সংলগ্ন দক্ষিণ মহাসাগরে বসবাস বহু বিরল গোত্রের মাছ, কচ্ছপ, তিমি, ডলফিন ও অন্যান্য প্রাণীর। অনিয়ন্ত্রিত এবং বেআইনিভাবে এসব প্রাণীদের শিকার করে একদল মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এবং পরিবেশবিদদের কাছে তারাই পরিচিত ‘আন্টার্কটিকার জলদস্যু’ হিসাবে। অবশ্য তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ‘ইকো-পাইরেট’ শব্দবন্ধটি। ক্রিল এবং টুথ ফিশ- ১৯৭০-এর দশক থেকেই প্রধানত এই দুই প্রজাতির মাছই শিকার করতো লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, জাপান, চীন, নরওয়ে রাশিয়ার মানুষরা। এমনকি অহরহ তিমি ও ডলফিন ধরা পড়ত তাদের জালে। তখন থেকেই তথাকথিত এই ‘সভ্য’ জলদস্যুদের অত্যাচারে বিপর্যস্ত হচ্ছে দক্ষিণ মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্র। ১৯৭৭ সালে আন্টার্কটিকার ইকো-পাইরেটদের শায়েস্তা করতে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র একটি সংগঠন গড়ে তোলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিবেশবিদরা। ‘সে শেফার্ড কনজারভেশন সোসাইটি’-খ্যাত এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কানাডিয়ান পরিবেশবিদ পল ওয়াটসন। পরের বছর জাহাজে টহল দিয়ে বেড়াতেন পরিবেশবিদরা। এমনকি সহিংসতার পথও বেছে নেন তারা। স্মোক গ্রেনেড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ারও ব্যবহারের কারণে জেলও খাটতে হয়েছে পল ওয়াটসনকে। এত কিছুর পরেও আজ দিব্যি দক্ষিণ মহাসাগরে সক্রিয় অবৈধ মৎস্য শিকারের চক্র। চোরাগোপ্তা শিকার করা হয় তিমি ও ডলফিনও। প্রকৃতির সেই করাল রূপকে বশীভূত করবে, সাধ্য কার? একমাত্র এই সমস্যার ইতি টানতে পারে অবৈধ মৎস্য শিকারের সঙ্গে জড়িত দেশের সরকারগুলোই। কিন্তু সেই সুবুদ্ধির উদ্ভব হবে কি?

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত